ছবি : রয়টার্স

আগামী দু’ মাসের মধ্যে চীনকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হতে যাচ্ছে ভারত। জাতিসংঘের বৈশ্বিক জনসংখ্যা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল ভারতের জনসংখ্যা হতে যাচ্ছে ১৪২ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫০ জন। ওই দিনই জনসংখ্যার হিসেবে চীনকে পেছনে ফেলবে ভারত।  

কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা কত— সে সম্পর্কিত সঠিক ও নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই দেশটির সরকারের কাছে। একগুচ্ছ প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত ও আণুষাঙ্গিক অন্যান্য সমস্যা এজন্য দায়ী।

প্রতি এক দশক পর পর জনশুমারি হয় ভারতে। ২০১১ সালের শুমারির পর জানা গিয়েছিল, ওই সময় দেশটির জনসংখ্যা ছিল ১২১ কোটির কিছু বেশি।

হিসেব অনুযায়ী, ২০১১ সালের দশ বছর পর— ২০২১ সালে জনশুমারি হওয়ার কথা এবং জনসংখ্যা ও  তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সূচক, যেমন – কর্মসংস্থান, গৃহায়ন, শিক্ষার হার, অভিবাসন ইত্যাদি সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য থাকার কথা ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের কাছে।

কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২১ সালে জনশুমারি শুরু হলেও পরে তা গতি হারিয়ে বর্তমানে স্থবির অবস্থায় রয়েছে। ফলে সরকারের কাছেও জনসংখ্যা ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য সূচক সম্পর্কে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই।  

২০২১ সালের জনশুমারির জন্য ২০১৯ সালেই পরিকল্পনা নিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। শুমারির জন্য বাছাই করা হয়েছিল প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার সরকারি স্কুলশিক্ষককে, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংখ্যা ও সম্পর্কিত বিভিন্ন সূচক সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করবেন। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের বাজেট ধরা হয়েছিল ৮৭ হাজার ৫০০ কোটি রুপি।

কিন্তু এই পরিকল্পনার সামনে বাধা হিসেবে কাজ করেছে করোনা মহামারি, রাজ্যসরকার নির্বাচন ও প্রযুক্তিগত জটিলতা। করোনা মহামারি জেরে ২০২০ সাল থেকেই বন্ধ করা হয়েছিল স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; ২০২১ সালেও তা অব্যাহত ছিল। এই সময়সীমায় করোনার কয়েকটি বিধ্বংসী ঢেউ মোকাবিলা করতে হয়েছে ভারতকে। ফলে ওই বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় জুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কার্যত অসম্ভব ছিল স্কুলশিক্ষকদের পক্ষে।

তারপর ২০২২ সালে রাজ্যসরকার নির্বাচন হলো ভারতের ৯টি রাজ্যে। এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ও গণনা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করতে হয়েছে সেসব সরকারি স্কুলশিক্ষকদের, যাদেরকে জনশুমারি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আবার একই সময়ে, বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কার্যক্রমেও তাদের যুক্ত থাকতে হয়েছে। এটি ছিল দ্বিতীয় বড় বাধা।

আর তৃতীয় বা শেষ বাধাটি প্রযুক্তিগত। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুমারির জন্য যে সফটওয়্যারটি বাছাই করা হয়েছিল— সেটিতে গুরুতর কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং সেসব ঠিক করতে সময় লাগবে; আর কেন্দ্র থেকেও নতুন সফটওয়্যার ব্যবহার সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা আসেনি।

এদিকে, হালনাগাদ তথ্য হাতে না থাকায় বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ভারতের সরকারি প্রশাসনকে। দেশটির অন্যতম সরকারি থিংকট্যাংক সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিন্যান্স অ্যান্ড পলিসির ফেলো রচনা শর্মা রয়টার্সকে বলেন, ‘হালনাগাদ তথ্য না থাকায় সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সরকারকে পড়তে হচ্ছে তা হলো— জনগুরুত্বপূর্ণ নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এখনও ২০১১ সালের শুমারির তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বাস্তবক্ষেত্রে এসব নীতি-সিদ্ধান্ত সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম, কারণ গত ১১ বছরে দেশের জনসংখ্যাসহ অন্যান্য সূচকে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।’

‘২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন হবে ভারতে। যদি হালনাগাদ তথ্য না থাকে, সেক্ষেত্রে নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুতের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়বে রাজনৈতিক দলগুলো,’ রয়টার্সকে বলেন রচনা শর্মা।

এসএমডব্লিউ