জাতিসংঘের বিশেষ দূত টর ওয়েন্নেসল্যান্ড, ফাইল ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের দুই বিবদমান জাতি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত দিন দিন আরও তীব্র হয়ে উঠছে। দুই জাতির মধ্যে বাড়তে থাকা এই সংঘর্ষ উভয়কেই ‘খাদের কিনারায়’ নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জেরুজালেমে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত টর ওয়েন্নেসল্যান্ড।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টর ওয়েন্নেসল্যান্ড বলেন, ‘রক্তপাত বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো দৃঢ় কূটনীতি এবং এটি যত দ্রুত শুরু করা যায়, ততই উভয়ের জন্য মঙ্গল। জাতিসংঘ এই দায়িত্ব নিতে পারে না, আমরা ফিলিস্তিন শাসন করতে পারি না।’ ফিলিস্তিনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন হ্রাস পাচ্ছে বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি।

গত কয়েক দশক ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে দুই জাতির লোকজনের মধ্যে। তার মধ্যে গত বছর অধিকৃত পশ্চিম তীর অঞ্চলে আবাসন প্রকল্পের নামে ইসরায়েল করে দখল তৎপরতা বাড়ানোর পর থেকে নতুন মাত্রা পেয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যকার শত্রুতা।  

সামনের দিনগুলোতে সংঘাত আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে; কারণ গত বছরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে যে নতুন সরকার ইসরায়েলের ক্ষমতায় এসেছে, তা ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে কট্টর ডানপন্থী সরকার এবং ইতোমধ্যেই নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন—অধিকৃত ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপনকে অগ্রাধিকার দেবে তার সরকার।

এদিকে, অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত ফিলিস্তিনে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ সরকারের অবস্থাও ভালো নয়। ২০০৭ সালে গাজা ভূখণ্ডের শাসনক্ষমতা কট্টরপন্থী গোষ্ঠী হামাসকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ফাতাহ। এতদিন পশ্চিম তীর এলাকার নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকলেও নতুন প্রজন্মের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কারণে বর্তমানে বেশ কোনঠাসা অবস্থায় আছে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন সরকার। পশ্চিম তীর এলাকার দুই শহর— জেনিন ও নাবলুস এখন কার্যত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে আছে।

মধ্যপ্রাচ্যে শাস্তি স্থাপন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের যে মিশন কাজ করছে, তার বিশেষ সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন টর ওয়েন্নেসল্যান্ড। ১৯৯০ সালে অসলো চুক্তির আওতায় পদটি ‍সৃষ্টি করা হয়েছিল।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে বাড়তে থাকা সহিংসতা ও সংকট কমাতে দু’পক্ষের সরকারি কর্মকর্তাদের একটি ঐক্যের জায়গায় আনতে ব্যাপক চেষ্টা ও ছুটোছুটি করছেন ওয়েন্নেসল্যান্ড; কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হচ্ছে না। দীর্ঘস্থায়ী শান্তির আশাও ক্রমে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা অবশ্য স্বীকার করেছেন, ইসরায়েলের বর্তমান যে ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ এবং ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব যে ‘জটিলতা’র মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে কূটনীতিক আলোচনার পরিবেশ বেশ কঠিন; তবে একেবারেই যে তা অসম্ভব— সে কথাও মানতে রাজি নন তিনি।

‘ইসরায়েলে যে সরকারই থাকুক, রামাল্লায় যে কর্তৃপক্ষই থাকুক, বর্তমানে যে জটিলতা শুরু হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে কূটনৈতিক আলোচনার কোনো বিকল্প নেই এবং জাতিসংঘ মনে করে এখনও কূটনীতিক পথে এগোনোর সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি,’ বিবিসিকে বলেন ওয়েন্নেসল্যান্ড।

এসএমডব্লিউ