পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারে মসজিদে বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছেছে ১০০-তে। পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালের মুখপাত্র মোহাম্মদ আসিম এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার মৃত্যু হয়েছিল ৫৯ জনের বাকি ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার। এছাড়া বোমা হামলার পর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে ৫৩ জন এখনও লেডি রিডিংয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।

‘চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ৭ জন আছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে,’ বিবৃতিতে বলেছেন মোহাম্মদ আসিম।

তবে আহতদের বেশিরভাগই শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন আসিম। পাশাপাশি, তাদের সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে জোহরের নামাজ চলার সময় আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটে পেশোয়ারের পুলিশ লাইন্স এলাকার একটি মসজিদে। শক্তিশালী সেই বোমার আঘাতে মসজিদের ছাদ ও একপাশের দেওয়াল ধসে পড়ে। ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন হামলাকারী নিজেও।

পেশোয়ারের যে এলাকায় মসজিদটির অবস্থান, সেটি শহরের অন্যতম সুরক্ষিত এলাকা (রেড জোন) হিসেবে পরিচিত। মসজিদটিতে যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করতে আসেন, তাদের অধিকাংশই পুলিশ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী।

পেশোয়ার পুলিশের প্রধান মুহম্মদ ইজাজ খান পাাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনকে জানিয়েছেন, হামলার সময় মসজিদটিতে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ নামাজ পড়ছিলেন এবং যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশই পেশোয়ার পুলিশ বাহিনীতে আছেন।

আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবানগোষ্ঠীর পাকিস্তান শাখা তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে। টিটিপির কমান্ডার সারবাকাফ মোহমান্দ এক টুইটবার্তায় বলেছেন, গত বছর আগস্টে এক পুলিশি অভিযানে নিহত হয়েছিলেন টিটিপির কমান্ডার ও সারবাকাঠের ভাই উমর খালিদ খুরাসানি। সেই হত্যার বদলা নিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক মোয়াজ্জেম জাহ আনসারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, হামলায় প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, অন্তত একমাস ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পর এই হামলা চালানো হয়েছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে মসজিদের কোনো না কোনো সূত্র সংশ্লিষ্ট। পুলিশ লাইন্স এলাকাটি পেশোয়ারের অন্যতম রেড জোন এবং অভ্যন্তরীণ কোনো সহায়তাকারী না থাকলে হামলাকারী বা টিটিপির একার পক্ষে এত বড় সহিংসতা ঘটানো খুবই কঠিন ছিল।’

এই ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সেই কমিটি কাজও শুরু করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন তিনি।

হামলায় নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার শোক দিবস ঘোষণা করেছে খাইবার পাখতুনখোয়া সরকার।

এসএমডব্লিউ