টালমাটাল আদানি, ছিটকে গেলেন বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকে
ভারতের বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রুপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ ওঠার পর টালমাটাল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন এর শীর্ষ নির্বাহী গৌতম আদানি। এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির কোম্পানিকে নিয়ে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে গত কয়েক দিনে এই কোম্পানির সম্পদ কমেছে ৭ হাজার ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুতগতিতে সম্পদ হারিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছেন গৌতম আদানি। এমনকি এই গতিতে সম্পদের অবনমন ঘটতে থাকলে শিগগিরই এশিয়ার শীর্ষ ধনীর তকমাও হারাতে পারেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ভারতীয় এই ধনকুবের মঙ্গলবার বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ১১ নম্বরে নেমে গেছেন। হারাতে হারাতে আদানির বর্তমান সম্পদের পরিমাণ কমে ৮ হাজার ৪৪০ কোটি ডলারে ঠেকেছে। আর এর মধ্য দিয়ে ভারতের আরেক ধনকুবের ও আদানির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির চেয়ে মাত্র এক ধাপ ওপরে আছেন গৌতম আদানি। মুকেশ আম্বানির বর্তমান মোট সম্পদের পরিমাণ ৮ হাজার ২২০ কোটি ডলার।
গত ২৫ জানুয়ারি ‘কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ তুলে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। আদানির জালিয়াতি নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র তিন দিনে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়। ওই তিন দিনে আদানি ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ হারান।
ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, বর্তমানে মেক্সিকোর ধনকুবের কার্লোস স্লিম, গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন এবং মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিভ বালমারের নিচে অবস্থান করছেন আদানি।
এর আগে, রোববার শেষ রাতের দিকে হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনের জবাব দিয়েছে আদানি গ্রুপ। ৪১৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলছে, ভারতীয় আইন ও বিধি-বিধান মেনে আদানি গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য যথাযথভাবে প্রকাশ করা হয়। সঠিক কোনও প্রমাণ বা নথিপত্র ছাড়াই হিন্ডেনবার্গ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে অভিযোগ করেছে আদানি গ্রুপ।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে মরিশাস এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ’ রয়েছে; যা পুরো গ্রুপটির আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে।
প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ভারতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য নিজেদের পক্ষে নির্ধারণ করার জন্য এসব অফশোর কোম্পানিকে ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আদানি গ্রুপের অভিযোগের জবাবে হিন্ডেনবার্গ বলেছে, এটা পরিষ্কার, আমরা ভারতকে প্রাণবন্ত্র গণতন্ত্র আর চমৎকার ভবিষ্যতের উদীয়মান পরাশক্তি হিসাবে মনে করি। তবে ভারতের ভবিষ্যৎ আদানি গ্রুপের কাছে আটকে আছে; আর জাতিকে পরিকল্পিতভাবে লুণ্ঠন করতে গিয়ে নিজেকে ভারতীয় পতাকায় ঢেকে দিয়েছে আদানি গ্রুপ।
এসএস