প্রতীকী ছবি

বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর) ভারত, চীন, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি কমেছে ইসলামাদের। তবে বাংলাদেশে রপ্তানি বেড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের রপ্তানি বিষয়ক তথ্য নিয়ে সোমবার স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রপ্তানি বাড়লেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে আঞ্চলিক ৯টি দেশে সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানের রপ্তানি ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বন্যা-ত্রাণ নিল না পাকিস্তান

মূলত পাকিস্তান থেকে চীনে চালান কমে যাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রকাশিত ওই তথ্যে বলা হয়েছে।

দ্য ডন বলছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ইরান, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপে পাকিস্তানের মোট রপ্তানি ১.৮৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পাকিস্তানের মোট ১৪.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির মাত্র ১৩.৩১ শতাংশ।

অবশ্য ভারত ও বাংলাদেশসহ অন্যান্য জনবহুল দেশকে পেছনে ফেলে আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের রপ্তানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চীন। কিন্তু এরপরও চীনে পাকিস্তানের রপ্তানি অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে হ্রাস পেয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির আঞ্চলিক রপ্তানির সিংহভাগই চীনে হয়েছে। যার পরিমাণ ৫৫.৭৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশসহ অন্য সাতটি দেশে বাকি ৪৪.২৩ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

দ্য ডন বলছে, অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে চীনে পাকিস্তানের রপ্তানি ২০.৫৭ শতাংশ কম হয়েছে। আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে চীনে রপ্তানির পরিমাণ ১.৩৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সেটি ১.০৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। তবে এই একই সময়ে চীন থেকে পাকিস্তানে আমদানি বেড়েছে।

এদিকে অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে পাকিস্তানের রপ্তানি বেড়েছে ৫.৩৫ শতাংশ। প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে রপ্তানির পরিমাণ ৪২০.৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৯৯.৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে বাংলাদেশে বাড়লেও শ্রীলঙ্কায় কমেছে পাকিস্তানের রপ্তানি। আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে শ্রীলঙ্কায় ইসলামাবাদের রপ্তানি ছিল ১৭৪.৮৮ মিলিয়ন ডলার। এবার সেটি ৮.০১ শতাংশ কমে ১৬০.৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সমাহিত হতে চান পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক বিচারপতি

একই সময়সীমায় আফগানিস্তানে পাকিস্তানের রপ্তানি বেড়েছে ৪.৬০ শতাংশ। ২০২১ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে রপ্তানি ছিল ২৪০.৫০ মিলিয়ন ডলারের। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ২৫১.৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

কয়েক বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের পর আফগানিস্তানেই সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করত পাকিস্তান। তবে ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ইসলামাদের রপ্তানি কমতে শুরু করে। অন্যদিকে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানের সরকার আফগানিস্তান থেকে রুপিতে আমদানির অনুমতি দেয়। অবশ্য রুপিতে করা সেই আমদানির হিসাব এই পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয়নি।

এছাড়া আফগানিস্তান এবং ইরান থেকে টমেটো ও পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর থেকে অব্যাহতি দিয়েছে পাকিস্তানের সরকার। ফলস্বরূপ স্থানীয় সরবরাহের ঘাটতি পূরণ করতে গত কয়েক মাসে রান্নাঘরের প্রধান এই পণ্য দুটির আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে সরকারি চ্যানেলে ইরানে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে পাকিস্তানের রপ্তানি হয়েছে ২২ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণের। তবে গত বছর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত এই দেশটিতে পাকিস্তান থেকে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি।

দ্য ডন বলছে, তেহরানের সাথে পাকিস্তানের বেশিরভাগ বাণিজ্য বেলুচিস্তানের সীমান্ত এলাকায় অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সরকার তাফতান ও গোয়াদর সীমান্ত শুল্ক স্টেশনে পেঁয়াজ ও টমেটো আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া ইরানের সাথে বিনিময় বাণিজ্যও করেছে পাকিস্তান।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ভারতে পাকিস্তানের রপ্তানি ৭৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় ভারতে রপ্তানি ৫ লাখ ১৭ হাজার মার্কিন ডলার থেকে কমে ১ লাখ ২৬ হাজার মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।

আরও পড়ুন: যে কারণে বাংলাদেশের ত্রাণ নিচ্ছে না পাকিস্তান

এছাড়া বর্ষা ও বন্যার কারণে পাকিস্তানে সবজি ও তুলার ফসল ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। আর তাই ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে তুলা ও সবজি আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি জোরালো হয়েছে।

এদিকে নেপালে পাকিস্তানের রপ্তানি ৪.০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬১.৭৮ শতাংশ কমে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দাঁড়িয়েছে ১.৫৪ মিলিয়ন ডলারে। তবে মালদ্বীপে রপ্তানি ৩.১৬ মিলিয়ন থেকে ২৮.১৬ শতাংশ বেড়ে ৪.০৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

অন্যদিকে ভুটানেও পাকিস্তানের রপ্তানি বেড়েছে। দেশটিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৮ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের প্রান্তিক রপ্তানি রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত বছর ভুটানে পাকিস্তানের ১৮ হাজার ডলার মূল্যের রপ্তানির তুলনায় ১৬৬ শতাংশ বেশি।

টিএম