পাকিস্তানে মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত ২৮
পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারের একটি মসজিদে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এই বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন আরও ১৫০ জনের বেশি। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিস্ফোরণে হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করে পেশোয়ারের কমিশনার রিয়াজ মেহসুদ বলেছেন, মসজিদের ভেতরে উদ্ধার অভিযান চলমান আছে। অনেকেই মসজিদের ধ্বংস্তুপের নিচে আটকে পড়ায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম বলছে, সোমবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে পেশোয়ারের পুলিশ লাইন এলাকার ওই মসজিদে যখন বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখন যোহরের নামাজ চলছিল সেখানে। সাধারণত ৪০০ থেকে ৫০০ মুসল্লির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ওই মসজিদে যোহরের নামাজের সময় ২০০ জনের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডনকে হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালের মুখাপাত্র মোহাম্মদ আসিম।
ঘটনাস্থল থেকে ডনের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শক্তিশালী বিস্ফোরণের ধাক্কায় মসজিদ ভবনের একাংশের দেয়াল ধসে গেছে এবং নামাজের জামাতে যারা সামনের সারিতে ছিলেন তাদের অনেকেই ধ্বংস্তুপের নিচে চাপা পড়েছেন।
ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়াদের উদ্ধারে ইতিমধ্যে পুলিশ, সামরিক বাহিনী ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ স্কোয়াডের সদস্যদের পাশাপাশি তৎপরতা শুরু করেছেন সাধারণ লোকজনও।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, বিস্ফোরণের সময় তিনি মসজিদে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, এটা শক্তিশালী বিস্ফোরণ ছিল। বিস্ফোরণের পর সর্বত্র ধোঁয়া উড়ছিল।
এই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, মসজিদের ভেতরে ২০০ জনের বেশি মানুষ নামাজ আদায়ের সময় বিস্ফোরণটি ঘটেছে। এটা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। কারণ বোমা হামলাকারী মসজিদের ভেতরে ছিলেন। নামাজ শুরু হওয়া মাত্রই বিস্ফোরণটি ঘটেছে। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য বলে জানিয়েছেন তিনি।
মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন সিভিল সেক্রেটারিয়েট অ্যাসোসিয়েশন পেশোয়ারের সভাপতি তাসাভুর ইকবাল। তিনি বলেন, পুলিশ লাইন্স এলাকায় সবসময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরিচয়পত্র এবং দেহ তল্লাশি ছাড়া কেউই এই মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন না।
পেশোয়ারের এই বাসিন্দা বলেন, আজকের এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা অনেক বড় মসজিদ। একসাথে ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। বিস্ফোরণে ভবনের একাংশ ধসে গেছে।
তবে বোমাটি আগে থেকেই মসজিদে পেতে রাখা হয়েছিল নাকি এটি আত্মঘাতী হামলা— তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন দেশটির পুলিশ কর্মকর্তারা। বিস্ফোরণস্থলের আশপাশের সব সড়ক ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইসলামাবাদেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হামলার নিন্দা
এদিকে, মসজিদে বিস্ফোরণের এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মসজিদের ভেতরে বিস্ফোরণ প্রমাণ করে, হামলায় জড়িতদের ‘ইসলামের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই।’
মসজিদে হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেছেন, ‘এই সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালনকারীদের লক্ষ্য করে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।’
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) January 30, 2023
দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খান এক টুইটবার্তায় এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসবাদী আত্মঘাতী হামলা’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন। হতাহতদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি।
‘সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলায় আমাদের পুলিশ ও গোয়েন্দাবাহিনীকে আরও উন্নততর প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন,’ টুইটবার্তায় বলেন ইমরান খান।
গত বছর পেশোয়ারের একটি মসজিদে প্রায় একই ধরনের একটি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। শহরটির কোচা রিসালদার এলাকার এক শিয়া মসজিদে নামাজ চলাকালীন আত্মঘাতী সেই বোমা হামলার ঘটনায় প্রাণ হারান ৬৩ জন।
এসএমডব্লিউ/এসএস