ফাইল ছবি, বিবিসি

ভারতের সর্বদক্ষিণের রাজ্য কেরালার রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রী বাঘের বন্ধ্যাকরণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ব্যাপক বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। সম্প্রতি অবশ্য বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তার কোনো ‘তাড়া’ নেই।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ জানুয়ারি। সেদিন কেরালার ওয়ানাড় জেলার মানান্থাভেদির ফরেস্ট রেঞ্জ থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির ওপর হামলা চালায়। পরে তার দেহাবশেষও উদ্ধার করা হয়।

তারপর থেকেই ওই গ্রাম ও তার আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দারা বাঘটিকে হত্যার দাবিতে মানান্থাভেদি ফরেস্ট রেঞ্জের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে রাজ্য সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী একে শশীন্দ্রানের শরণাপন্ন হন ফরেস্ট রেঞ্জের কর্মকর্তারা।

মন্ত্রীকে মূল সমস্যাটি জানানোর পর তিনি ‘সমাধান’ হিসেবে বাঘটিকে ধরে হত্যার পরিবর্তে সেটিকে বন্ধ্যা করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে নিজেদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কেরালার বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।

পরে একে শশীন্দ্রানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি এ রকম কোনো সমাধান দিইনি। ফরেস্ট রেঞ্জের কর্মকর্তারা এটি প্রস্তাব করেছিলেন, আমি তার অনুমোদন দিয়েছি মাত্র।’

এদিকে বাঘের হামলা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে মন্ত্রীর এই ‘সমাধান’ সংবাদমধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের পরিবেশবাদী, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালানো বিভিন্ন সংস্থা— এমনকি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বোর্ডও এটির ব্যাপক সমালোচনা করেছে।

ভারতের বাঘ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদী আন্দোলনকর্মী ড. উল্লাস কারনাথ বিবিসিকে বলেন, ‘বর্তমান পৃথিবীতে বাঘ বিলুপ্তপ্রায় না হলেও বিরল প্রাণী। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে বাঘের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৬টি। শতকরা হিসেবে বলা যায়, এখন বিশ্বে যতসংখ্যক বাঘ রয়েছে, তার ৭০ শতাংশেরও বেশি বাঘের বাস ভারতে।’

‘কিন্তু বাঘের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো— এটির বংশবৃদ্ধির হার ধীর। বিশ্বজুড়ে গত ৫০ বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১ হাজার। ফলে, যেহেতু আমরা বাঘের সংখ্যা বাড়াতে চাই— তাই বাঘের বন্ধ্যাকরণের চিন্তা আমার কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না।’

‘যদি কোনো বাঘ মানুষখেকো হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে সেটির হামলা থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে হত্যা বা বন্ধ্যাকরণ ব্যতীত সম্ভাব্য সব বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সেসব ব্যবস্থা যদি ব্যর্থ হয়— একমাত্র তাহলেই হত্যা বা বন্ধ্যাকরণ করা যেতে পারে।’

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বোর্ডের সাবেক সদস্য প্রবীন ভার্গভ বিবিসিকে বলেন, ‘ভারতের আইনে বাঘ বন্ধ্যাকরণের পক্ষে কোনো কথা বলা হয়নি। তাই কেরালার মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।’

এ কে শশীন্দ্রান অবশ্য বলেছেন, সমাধান তিনি অনুমোদন করলেও তা বাস্তবায়নে কোনো তাড়া দেবেন না তিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন একটি নীতি নিতে হবে, যার আওতায় মানুষ ও বন্যপ্রাণী উভয়েরই সুরক্ষা নিশ্চিত হবে…..যাই হোক, এ ব্যাপারটিতে (বাঘের বন্ধ্যাকরণ) আমার কোনো তাড়া নেই।’

এসএমডব্লিউ