বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে বিশ্বের দীর্ঘতম নৌবিহার ‘গঙ্গা বিলাস’ উদ্বোধনের তিন দিনের মাথায় বিভ্রাটের মুখোমুখি হয়েছে। ভারতের উত্তরপ্রদেশ থেকে যাত্রা শুরুর পর সোমবার মাঝ গঙ্গায় আটকে গেছে বিলাসবহুল এই প্রমোদতরী। বিহার রাজ্যের ছাপরায় গঙ্গার অগভীর পানিতে হঠাৎ ‘গঙ্গা বিলাস’ আটকা পড়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, সোমবার বিহারের চিরান্দ প্রত্নক্ষেত্রে যাত্রীদের নামানোর জন্য গঙ্গার তীর বরাবর এগিয়ে আসছিল গঙ্গা বিলাস। সে সময় হঠাৎ গঙ্গার পলির মধ্যে আটকে যায় সেটি। যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চিরান্দ পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি ছোট নৌকা নিয়ে আসা হয়। সেই নৌকাতে করে যাত্রীদের নিরাপদে পাড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।

ছাপড়া জেলা প্রশাসন বলছে, গঙ্গার ওই অংশে পানি কম থাকায় প্রমোদতরীটি কূলে ভিড়তে গিয়ে এক জায়গায় আটকে যায়। তবে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

• আরও পড়ুন: ঘুরতে লাগবে ২৫ লাখ টাকা, তবুও শেষ গঙ্গা বিলাসের এক বছরের সব টিকিট

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্বের দীর্ঘতম এই নৌবিহারের উদ্বোধন করেন। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে ডিব্রুগড় হয়ে জলপথে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাবে ‘গঙ্গা বিলাস’।

এনডিটিভি বলছে, এমভি গঙ্গা বিলাস ভারতে তৈরি প্রথম ক্রুজ জাহাজ। এটি নদীপথে ৫১ দিন ভ্রমণ করবে। প্রথম যাত্রার অংশ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের ৩২ জন পর্যটককে বারাণসী বন্দরে মালা এবং শেহনাইয়ের সুর দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ক্রুজে যাত্রা করার আগে তারা বারাণসীর বিভিন্ন ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন।

ক্রুজের পরিচালক রাজ সিং বার্তাসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, চলন্ত এই পাঁচ তারকা হোটেলে ৩৬ জন পর্যটকের ধারণক্ষমতাসহ ১৮টি স্যুট রয়েছে। এ ছাড়া এতে ৪০ জন ক্রু সদস্যের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক এই প্রমোদতরীটির দৈর্ঘ্য ৬২ মিটার এবং প্রস্থ ১২ মিটার।

ভারত ও বাংলাদেশের ২৭টি নদী দিয়ে যাবে বিলাসবহুল নৌযান গঙ্গা বিলাস। পথে পড়বে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। পড়বে সুন্দরবনও কাজিরাঙার মতো বনভূমি। এ সবই দেখতে দেখতে চলবেন নৌযানের যাত্রীরা।

• আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশ থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসাম: প্রমোদতরীর উদ্বোধন করলেন মোদি

উত্তরপ্রদেশের পর্যটন মন্ত্রী জয়বীর সিং এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, গঙ্গা বিলাস নামের ক্রুজটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, জাতীয় উদ্যান, নদীর ঘাট এবং বিহারের পাটনা, ঝাড়খণ্ডের শাহীগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, বাংলাদেশের ঢাকা, আসামের গুয়াহাটির মতো বড় শহরগুলোসহ ৫০টি পর্যটন গন্তব্য কভার করবে।

এছাড়া এই ক্রুজটিতে স্পা, সেলুন এবং জিমের মতো সুবিধাও রাখা হয়েছে। রাজ সিং বলেন, ক্রুজটিতে ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার রুপি খরচ হবে, আর ৫১ দিনের যাত্রার জন্য প্রতি যাত্রীর জন্য মোট খরচ হবে প্রায় ২০ লাখ রুপি।

তিনি আরও বলেন, অত্যাধুনিক এই ক্রুজটি দূষণমুক্ত ব্যবস্থা এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তিতে সজ্জিত।

ভারতের কেন্দ্রীয় বন্দর শিপিং এবং জলপথ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘এই প্রমোদতরীতে ভ্রমণ বিদেশি পর্যটকদের সমুদ্রযাত্রার অভিজ্ঞতা এবং ভারত ও বাংলাদেশের শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আধ্যাত্মিকতায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে।’

তবে পরিবেশবিদরা বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে চালু হওয়া এই নৌবিহার নদনদী ও প্রকৃতির ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এসএস