বুধবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামের রানিচকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনাকে প্রতিপক্ষ বিজেপির ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে দিল্লির প্রধান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার দুপুরে দলের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল লিখিত অভিযোগ নিয়ে সেখানে যাবেন বলে জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সূত্র।

প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা এবং লোকসভার এমপি সৌগত রায়, এমপি কাকলি ঘোষ দস্তিদার, জয়নগরের এমপি প্রতিমা মণ্ডল, এমপি শতাব্দী রায় এবং রাজ্যসভার সদস্য শান্তনু সেন। দলের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে কিছু প্রমাণ তুলে ধরবেন তারা।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজারকে তৃণমূল সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগের স্বপক্ষে এভিডেন্স (সাক্ষ্য-প্রমাণ) হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি যুব মোর্চার নেতা সৌমিত্র খাঁর বক্তব্যের কিছু ফুটেজ তুলে ধরা হবে।

বৃহস্পতিবার কলকাতার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে সৌগত রায় অভিযোগ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্রিগেড সমাবেশে মন্তব্য করেছিলেন—ভবানীপুর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর স্কুটার যদি নন্দীগ্রামে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনায় পড়ে, তবে তার দায় বিজেপি নেবে না। আর প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তৃতার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটল।’

সাংবাদিক বৈঠকে সৌগত রায় আরো বলেন, ‘শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও যুব মোর্চা সভাপতি সৌমিত্র খাঁও বলেছিলেন, ‘১০ তারিখের পর কী হবে দেখতে পাবেন’। ঠিক ১০ তারিখেই মুখ্যমন্ত্রীর ওপর এমন হামলার ঘটনা ঘটল।’

ইতোমধ্যে এই তিনজনের বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তৃণমূল সূত্র জানিয়েছে, বিজেপি নেতাদের এমন ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্যের জেরেই এমন ঘটনা ঘটেছে, এমনটাই দাবি করবেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।

বুধবার নন্দীগ্রামের রানিচকে একটি মন্দিরে হরিনাম সংকীর্তনে অংশ নিয়ে বের হওয়ার সময় চার-পাঁচজন ব্যক্তির ধাক্কায় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বাঁ পায়ের সঙ্গে মাথা ও কপালেও চোট লেগেছে।

আহত হওয়ার পর তাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক মণিময় বন্দোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘পরীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, তার বাঁ পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতার হাড়ে গুরুতর চোট রয়েছে। এছাড়া চোট রয়েছে ডান কাঁধ, ডান হাত ও গলায়। ঘটনার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনুভব করছেন। ৪৮ ঘণ্টার জন্য তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’

গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মমতা নিজেও অভিযোগ করেছেন, ঘটনার সময় কোনো পুলিশকর্মী বা জেলার পুলিশ সুপার কেউই ছিলেন না।

আগামী ২৭ মার্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হচ্ছে বিধানসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্য প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের আওতায় আসার পর রাজ্যে সরকারী স্তরে যেসব রদবদল হয়েছে সে বিষয়টিও দিল্লির প্রধান নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় কমিশন পরিচালিত প্রশাসন যথেষ্ট ‘উদাসীন’ ছিল বলেই তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল সূত্র। কমিশনের রাজ্য পুলিশের ডিজি বদলের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যে মুখ্যমন্ত্রী আক্রান্ত হলেন, সে কথাও জানাবে তৃণমূল প্রতিনিধি দল।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন রাজ্য প্রশাসনের দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই সংঘাত শুরু হয়েছে সরকারি দল তৃণমূলের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজনীতি বিশ্লেষকদের শঙ্কা, নির্বাচন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত, অর্থাৎ আগামী প্রায় দু’মাস এই সংঘাত অ্যাবহত থাকতে পারে।

সূত্র: আনন্দবাজার

এসএমডব্লিউ