দেবে যেতে পারে দার্জিলিংও, চাঞ্চল্যকর তথ্য
ভারতের উত্তরাখণ্ডের যোশিমঠের পরিস্থিতি হতে পারে দার্জিলিংয়েও! যোশিমঠের মতো দেবে যেতে পারে দার্জিলিংয়ের বেশ কিছু এলাকা। এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও নতুন নয়।
দার্জিলিংয়ে গত এক দশকে একের পর বহুতল স্থাপনা তৈরি হয়েছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে দোতলা থেকে বড় জোর তিনতলা বাড়ি দেখা যেত এখন সেখানে বহুতল, শপিং মল থেকে শুরু করে পাহাড়ের ঢালে একের পর এক তৈরি হয়েছে অট্টালিকা। যার বিপদ আঁচ করেছে স্থানীয় প্রশাসনও। কিন্তু সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে। যোশিমঠের ঘটনার পর উদ্বেগ বেড়েছে কয়েকগুণ।
বিজ্ঞাপন
যোশিমঠের আতঙ্ক দার্জিলিংয়ে
যোশিমঠে রোজ মাটি ধসে যাচ্ছে, ফাটল দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। এ দৃশ্য দেখে নতুন করে ভয় দানা বেঁধেছে দার্জিলিং পাহাড়ে। একই অবস্থা কালিম্পং ও কার্শিয়াংয়েও। এমনিতেই দার্জিলিং পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাটি ধসপ্রবণ ও ভূমিকম্পপ্রবণ। তা নিয়ে প্রতিবছরই সতর্কবার্তা জারি করে প্রশাসন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। সেবক এলাকায় তিস্তা নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। তার ফলে পাহাড়ের দেওয়ালে আরও চাপ বাড়ছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য, সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন, সবাই সে কথা জানে। তারপরেও বিপর্যয় রুখতে বড় কোনো পদক্ষেপ নজরে পড়েনি। তার ওপর সেবক-রংপো রেলপথ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। যদিও তা ধোপে টেকেনি।
দার্জিলিংয়ে ১৩২টি অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত
সম্প্রতি দার্জিলিং শহরের ১৩২টি নির্মাণ স্থাপনা অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। হামরো পার্টি ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি ভাঙাও হয়। এরপর পৌরসভায় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলে, উদ্যোগ আটকে যায়। অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, হামরো পার্টির অবৈধ নির্মাণ ভাঙার অভিযানের কারণেই তাকে বোর্ড হারাতে হয়েছে। যদিও এসব এখন অতীত। আসল সমস্যা থেকে বহুদূরে। তবে জিটিএ চিফ এক্সিকিউটিভ অনিত থাপাও পাহাড়ের বেআইনি নির্মাণ, বহুতল, নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এখন কতদিনে কাজ হয়, তা দেখতে হবে।
পৌর আইন কী বলছে?
রাজ্যের পৌর আইনে দার্জিলিং শহরে ১১.৫ মিটার উচ্চতার মধ্যে বাড়ি তৈরি করাই নিয়ম। কালিম্পং, মিরিক বা কার্শিয়াঙেও সেটাই মেনে চলার কথা। শুধু বিশেষ অনুমতিক্রমে পৌরসভা ও সরকারি কয়েকটি ভবন ১৩ মিটারের ধারে-কাছে থাকতে পারে। অভিযোগ, গত তিন দশক ধরে দার্জিলিংসহ পাহাড়ের শহরগুলোতে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ ও বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের ঢাল কেটে বহুতল ভবন তৈরি করা হয়েছে। একটির গায়ে আর একটি ভবন তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের ঢালে এ পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ানক বলেই বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন।
সতর্কতকা জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার
কালিম্পং, কার্শিয়াং, দার্জিলিংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল অত্যন্ত ধসপ্রবণ বলে মনে করছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই)। কয়েক বছর আগেই তারা এই পর্যবেক্ষণ জারি করেছিল। একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত দার্জিলিংয়ের পাশাপাশি, প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলেও এমন ধসপ্রবণতা রয়েছে বলে তারা জানান।
দার্জিলিংয়ের কোন কোন এলাকা ধসপ্রবণ?
জিএসআই একটা মানচিত্র জারি করেছিল। তাতে দার্জিলিং পার্বত্য এলাকার মোট ভূখণ্ডের ১৭ শতাংশই অতি ধসপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে মিরিকের তিনধারিয়া, লিম্বুধার, কার্শিয়াংয়ের গিদ্দাপাহাড়, গয়াবাড়ি, পাগলাঝোরা, দ্বারগাঁও। মাঝারি ধসপ্রবণ এলাকা ৪০ শতাংশ। বাকি ৪৩ শতাংশ তুলনায় অনেক কম ধসপ্রবণ। কয়েক বছর আগেই এ ম্যাপ জারি করা হয়। যা এখন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। আগামী দিনে এ এলাকাগুলো আরও ধসের শিকার হতে পারে। দার্জিলিংয়ের মোট এলাকার পরিমাণ ২ হাজার ৯২৩ বর্গ কিলোমিটার।
সিকিমেও মানচিত্র তৈরির কাজ করেছে জিএসআই। মানচিত্র বলছে উত্তর-পশ্চিম সিকিমই বেশি মাত্রায় ধসপ্রবণ। লাচুং, লাচেন, গুরুডোংমার, জুলুক এলাকা এই রকম।
কেন ধস নামছে?
অতিবৃষ্টির কারণ ছাড়াও এ এলাকার টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে গোটা হিমালয়ের পাথর ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। তাছাড়া এই এলাকা নবীন পাললিক শিলায় গঠিত। যার কারণে মাটি-পাথরের বুনন জমাট নয় ততটা। যার জেরেই দার্জিলিং-সিকিম এলাকায় অতি বৃষ্টিতে ধস নামছে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত। ধস সামলাতে বিভিন্ন সময়ে গত এক বছর ধরে বিজনবাড়ি-পালবাজার, সিটং-সেলফু, গোরুবাথান, লিম্বুধারা এলাকায় কর্মশালা হয়েছে। তবে এখনো অল আউট কাজ শুরু হয়নি। এখন যোশিমঠের ঘটনার পর যদি টনক নড়ে, তা দেখতে হবে।
ওএফ