ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের জোশিমঠ শহরে কয়েকটি বাড়িঘর ও একটি মন্দির দেবে যাওয়ার ঘটনায় ওই এলাকায় বেশ আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে জোশিমঠের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অবকাঠামো দেবে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে। ডুবন্ত এই শহরের ছয় শতাধিক পরিবারকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুশকর সিং ধামি ওই শহরে পৌঁছে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু উত্তরাখণ্ডের এই শহরের বাড়িঘর, অবকাঠামোতে ফাঁটল এবং সেগুলো কেন দেবে যাচ্ছে; সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান জিওলোজির পরিচালক কালাচাঁদ সেইন বলেছেন, নির্বিচারে অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিভিন্ন কারণে জোশিমঠ শহর দেবে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।

আর এসব কারণ সাম্প্রতিক কোনও বৈরীতা নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে সেখানে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বলেন তিনি।

দেশটির বার্তা সংস্থা পিটিআইকে কালাচাঁদ বলেছেন, জোশিমঠের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার পেছনে তিনি প্রধান তিনটি কারণ শনাক্ত করেছেন। তার মতে, প্রথমত— এক শতাব্দিরও বেশি সময় আগে একটি ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসের ধ্বংসাবশেষের ওপর শহরটি গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ত— শহরটির অবস্থান হিমালয়ের পাদদেশের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল-৫ এ অবস্থিত। তৃতীয়ত— ধীরে ধীরে আবহাওয়া আর জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ শিলার সমন্বিত শক্তি হ্রাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, ভূমিধসের ধ্বংসাবশেষের ওপর জোশিমঠের অবস্থান সম্পর্কে ১৮৮৬ সালে হিমালয়ান গেজেটিয়ারে প্রথম বারের মতো লিখেছিলেন অ্যাটকিন্স। এমনকি পরবর্তীতে মিশ্র কমিটি ১৯৭৬ সালে তাদের প্রতিবেদনে পুরোনো দেবে যাওয়া এলাকায় জোশিমঠ শহরের অবস্থান সম্পর্কে লিখেছিল।

ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অব হিমালয়ান জিওলোজির এই পরিচালক বলেন, হিমালয় অঞ্চলের নদীগুলোর স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গত বছর ঋষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা নদীর আশপাশের এলাকায় আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করেছিল। এই এলাকার গঠনগত বৈশিষ্ট্যও পরিস্থিতিকে আরও অবনতিশীল করে তুলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, জোশিমঠ শহরটি বদরিনাথ, হেমকুন্ড সাহিব ও আউলি এলাকার প্রবেশদ্বার। এই এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে যাচ্ছেতাই ভাবে নির্মাণকাজ চলছে। শহরটি যে চাপ মোকাবিলা করতে অক্ষম তা চিন্তা না করেই এই নির্মাণযজ্ঞ চলছে। যে কারণে সেখানকার বাড়িতে ফাঁটল দেখা দিতে পারে।

কালাচাঁদ সেইন বলেন, জোশিমঠের সর্বত্রই হোটেল এবং রেস্তোরাঁ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। জনসংখ্যার চাপ আর পর্যটকের ভিড়ের মাত্রাও বহুগুণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, শহরটির অনেক বাড়িঘরের টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই। এসব এলাকায় যারা বসবাস করেন, তাদের অবশ্যই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। কারণ জীবন অত্যন্ত মূল্যবান।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পর শহরটিকে ছোট ছোট এলাকায় ভাগ করে, বৃষ্টির পানির প্রবাহ ও এর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে পুনরায় পরিকল্পনা করতে হবে। এছাড়াও শহরটির ভূগর্ভের পাথরের শক্তির সক্ষমতাও পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার।

এসএস