চীন: করোনায় মৃত্যুর অপর্যাপ্ত তথ্য নিয়ে ডব্লিউএইচও’র হুঁশিয়ারি
চীনে ব্যাপকভাবে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে ভাইরাস সংশ্লিষ্ট প্রাণহানির তথ্যও। মূলত জিরো কোভিড নীতি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।
এই পরিস্থিতিতে চীনে কোভিড পরিস্থিতির প্রকৃত তথ্য অপর্যাপ্তভাবে প্রকাশ করা নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিশেষ করে প্রাণহানির তথ্য কম প্রকাশ করা নিয়ে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
জিরো কোভিড নীতি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে চীন। প্রত্যেক দিন অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দেশটিতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে ব্যাপক শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
কিন্তু এরপরও চীন করোনা পরিস্থিতির দৈনিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে এবং নিজস্ব কঠোর মানদণ্ড ব্যবহার করে গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ২২টি কোভিড মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ডব্লিউএইচওর জরুরি অবস্থা বিভাগের পরিচালক ডা. মাইক রায়ান বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, চীনে (কোভিড মৃত্যুর) সংজ্ঞা খুবই সংকীর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে, আইসিইউতে ভর্তির ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে মৃত্যুর ক্ষেত্রে চীনের প্রদত্ত পরিসংখ্যান কোভিড পরিস্থিতির প্রকৃত তথ্যকে কমভাবে উপস্থাপন করে’।
বিবিসি বলছে, চীন গত মাসে কোভিড সংক্রান্ত মৃত্যু ঘোষণার জন্য নিজেদের মানদণ্ড পরিবর্তন করে। এর ফলে শুধুমাত্র যারা শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতায় মারা যায় তাদের মৃত্যু করোনার কারণে হয়েছে বলে গণনা করা হয়।
চীনের এই মানদণ্ড অবশ্য ডব্লিউএইচওর নিয়মের বিরুদ্ধে। তবে ডা. রায়ান বলছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে চীন সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। আর এই কারণে তিনি ‘আরও ব্যাপক তথ্য’ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
তবে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, চীনের স্বতন্ত্র স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের নিজস্ব ডেটা এবং অভিজ্ঞতা জানাতে পারে।
ডা. রায়ান বলেছেন, ‘আমরা এই মৃত্যু এবং সংক্রমণের তথ্য রিপোর্ট করা ডাক্তার ও নার্সদের নিরুৎসাহিত করি না। সমাজে রোগের প্রকৃত প্রভাব রেকর্ড করতে সক্ষম হওয়ার জন্য আমাদের একটি উন্মুক্ত পদ্ধতি রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈজ্ঞানিক তথ্য ও পর্যালোচনা বিষয়ক সংস্থা এয়ারফিনিটি’র ধারণা, চীনে দিনে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং দেশটিতে দিনে কোভিডজনিত প্রাণহানির সংখ্যা ১৪ হাজার ৭০০।
চীন তার কঠোর ‘জিরো কোভিড পলিসির’ মূল অংশগুলো প্রায় এক মাস আগে শিথিল করার পর দেশটিতে সংক্রমণ ব্যাপকহারে বেড়েছে। ফলে এশিয়ার এই দেশটির হাসপাতাল এবং শ্মশানগুলোতে ভিড় বাড়ার খবরও পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতিতে এক ডজনেরও বেশি দেশ চীন থেকে আসা ভ্রমণকারীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে বেইজিং এগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সমালোচনা করেছে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
এছাড়া বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের করোনা পরিস্থিতিতে ‘কঠোর’ নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করে। এতে সুপারিশ হয় যে, চীন থেকে আসা যাত্রীদের ফ্লাইটে ওঠার আগেই কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট থাকতে হবে।
অবশ্য সংক্রমণের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি সত্ত্বেও চীনে কোভিডের কোনও নতুন রূপ পাওয়া যায়নি। তবে ডব্লিউএইচও সতর্ক করেছে, করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কম হওয়ার কারণে হয়তো এমন হতে পারে।
টিএম