মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়া রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা চান
ফুটো হয়ে যাওয়া নৌকায় চেপে ৪০ দিনের মর্মান্তিক সমুদ্রযাত্রার পর ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছে স্বস্তির সাথে কাঁদতে কাঁদতে এক স্বজনকে ফোন করেছেন রোহিঙ্গা মুসলিম ফাতিমাহ বিন ইসমাইল। ভিডিও কলে স্বজনের সঙ্গে কথা বলার সময় হাত কাঁপছিল তার। কাঠের নৌকায় করে বিপজ্জনক সমুদ্রপথের যাত্রা শেষে চলতি সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে যে ১৭৪ জন রোহিঙ্গা পৌছেঁঁছেন; ফাতিমাহ তাদেরই একজন।
দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বাঁচতে প্রায় ২০০ জন রোহিঙ্গা গত ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে ভারত মহাসাগর পেরিয়ে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। কয়েক সপ্তাহের যাত্রাপথে সমুদ্রে ২০ জন বা তারও বেশি রোহিঙ্গা মারা গেছেন। নৌকাটি ভেঙে যাওয়ার পর অনেকেই পানিতে লাফিয়ে পড়েন এবং ডুবে যাওয়ার ভয় নিয়ে ভাসতে শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন ফাতিমাহ। তিনি বলেন, তিনজন রোহিঙ্গা ক্ষুধা নিবারণ করতে পেরে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়েছিলেন। এরপর ১২ দিন ফুটো দিয়ে নৌকায় পানি উঠতে শুরু করে।
‘তাদের লাশ পানিতে যত্রতত্র ভাসছিল। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি।’
রোহিঙ্গারা মূলত বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী; যেখানে তারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছেন। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের পর প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
বাংলাদেশে আসার পর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা উন্নত জীবনের আশায় মরিয়া হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পালানোর চেষ্টা করছে।
তবে এই রোহিঙ্গাদের অনেকেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, গত ছয় সপ্তাহে অন্তত ৫০০ রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়া অথবা মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ ওই রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সহায়তা, খাদ্য এবং অস্থায়ী আশ্রয় প্রদান করেছে। পাশাপাশি তাদের আইনি মর্যাদা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বৈশ্বিক শরণার্থী সংস্থার সাথে কাজ করছে ইন্দোনেশিয়া।
ফাতিমাহ এখন মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত তার স্বজনদের সাথে মিলিত হওয়ার আশা করছেন। কিন্তু কখন অথবা কীভাবে তাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে সেবিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।
তিনি বলেন, আমি একটু স্বস্তির সাথে বাঁচতে চাই। আশা করছি, আমি এখানে ভালোভাবে বাঁচতে পারবো। নিরাপদে থাকতে পারো।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস