মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসী ঠেকানোর দেওয়াল ভেঙে ফেলা হচ্ছে
অবৈধ অভিবাসী ঠেকানোর লক্ষ্যে মেক্সিকো সীমান্তে তৈরি অস্থায়ী দেওয়াল সরিয়ে ফেলতে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের সরকার। এই দেওয়াল তৈরি নিয়ে মামলা ও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
মূলত অভিবাসীদের ঠেকাতে অস্থায়ী প্রাচীর ফেডারেল ভূমিতে বেআইনিভাবে তৈরি করা হয়েছে অভিযোগ করে একটি মামলা দায়ের করার এক সপ্তাহ পরে অ্যারিজোনা মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে রাখা শিপিং কন্টেইনারগুলোর একটি লাইন সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি এবং বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
অঙ্গরাজ্যটির রিপাবলিকান গভর্নরের নির্দেশে দেওয়ালটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, এই দেওয়াল অভিবাসীদের ঢেউকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে বাধা দেবে। তবে এই দেওয়ালের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ দায়েরকারীরা এই যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
৯০০টিরও বেশি শিপিং কন্টেইনার দিয়ে তৈরি এই দেওয়াল নির্মাণ করতে সরকারের অন্তত আট কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, বর্তমান রিপাবলিকান গভর্নর ডগ ডুসি গত আগস্ট মাসে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। যাতে রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থাকে তিনি মেক্সিকোর সাথে ৩৭০-মাইল (৬০০ কিমি) সীমানা বরাবর শিপিং কনটেইনারগুলোকে ব্যবহার করে ফাঁকগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের সীমান্ত এলাকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তবে তার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় মার্কিন বিচার বিভাগ যুক্তি দেয়, কন্টেইনার দিয়ে তৈরি দেওয়ালটি ফেডারেল জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল।
অবশ্য ডুসি এর আগে বলেছিলেন, অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যকে রক্ষা করার এবং এর নাগরিকদের রক্ষা করার অধিকার তার রয়েছে। এমনকি তার কার্যালয় থেকে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের আসার ক্রমবর্ধমান সংখ্যাকে ‘অশুভ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল।
বিবিসি বলছে, গভর্নর ডগ ডুসি এ বছরের শুরুতে করোনাডো ন্যাশনাল ফরেস্টে অস্থায়ী ব্যারিয়ার নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন সরকার গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দাবি করে, সাত-কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীরটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা ভূমিতে ঢুকে পড়েছে।
তবে বুধবার ফেডারেল সরকারের সাথে এক চুক্তির পর ডুসির নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বলেছে, ‘আগে নির্মাণ করা সব শিপিং কনটেইনার এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম, উপকরণ, যানবাহন ও অন্যান্য জিনিসগুলো জানুয়ারির প্রথম দিকে সরিয়ে ফেলা হবে।’
অবশ্য ওই এলাকায় কাজ করে পরিবেশ-রক্ষা গোষ্ঠী সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি এই ধরনের দেয়ালের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করেছিল।
সংস্থাটি দাবি করেছে, কন্টেইনারের প্রাচীরটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সংরক্ষিত বনকে বিভক্ত করেছে। যা হুমকির মুখে থাকা প্রাণীদের আবাসস্থল এবং পানীয় জলের উৎস ও অভিবাসন রুটগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে।
ডুসি অ্যারিজোনার গভর্নরের দায়িত্ব ত্যাগ এবং তার ডেমোক্র্যাটিক উত্তরসূরি কেটি হবস-এর দায়িত্ব গ্রহণের দু’সপ্তাহ আগে দেওয়ালটি ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলো।
উল্লেখ্য, অ্যারিজোনার সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মেক্সিকোর ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে এই সীমান্তের এক বিশাল অংশে ওই দেওয়াল তৈরি করা হয়।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতির মূল বিষয়।
টিএম