সম্প্রতি চীনে করোনা সংক্রমণ যে হারে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে অদূর প্রতিদিন ১০ লাখ নতুন আক্রান্ত রোগী এবং ৫ হাজার মৃত্যু দেখার ঝুঁকিতে আছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা ও বিশ্লেষণ সংস্থা এয়ারফিনিটি লিমিটেডের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।

চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দেশটিতে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার মানুষ এবং এদিন কোভিডজনিত অসুস্থতায় কারো মৃত্যুও হয়নি।

তবে এয়ারফিনিটি লিমিটেডের দাবি, চীনে করোনায় প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি তথ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। কারণ ৯৬ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশাল এই দেশটির প্রত্যন্ত অনেক এলাকার আক্রান্ত-মৃত্যুর তথ্য সরকার পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পারছে না।

চীনের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার মহামারিবিদ উয়ো জুনইউয়ের সাম্প্রতিক সতর্কবার্তা গুরুত্ব দিয়েছে এয়ারফিনিটি। কয়েক দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিশেষজ্ঞ সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছিলেন, বর্তমানে করোনার একটি ঢেউয়ের মধ্যে আছে এবং আগামী ২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষ হওয়ার আগে আরও দু’টি ঢেউ মোকাবিলা করতে হবে দেশটিকে।

বর্তমানে যে ঢেউটি চলছে, তার জের আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকবে বলেও উল্লেখ করেছিলেন উয়ো জুনইউ।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারি ঘোষণার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চীনেও দীর্ঘ লকডাউন, সামাজিক দূরত্ববিধি, বাড়ির বাইরে গেলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনসহ কঠোর সব করোনা বিধি জারি করেছিল।

গত ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে অধিকাংশ দেশ করোনা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া শুরু করলেও চীন তার আগের অবস্থানে অনড় ছিল চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত। করোনার বিরুদ্ধে চীন সরকারের এই কঠোর অবস্থান পরিচিতি পায় ‘জিরো কোভিড’ নীতি হিসেবে।

তার সুফলও অবশ্য পাওয়া যাচ্ছিল। মহামারির দুই বছরে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত ও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে— সেখানে চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই সময়সীমার মধ্যে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩৩ হাজারের কিছু বেশি মানুষ এবং মৃত্যু ছিল এক হাজারের কিছু ওপরে।

কিন্তু আড়াই বছরেরও বেশি সময়ে কঠোর করোনাবিধির মধ্যে থাকার জেরে অতিষ্ঠ চীনের সাধারণ জনগণ গত নভেম্বরের শেষদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। জনগণের এই বিক্ষোভের পর চলতি ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসে দেশটির সরকার।

তার পর থেকেই দেশটিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের ভিড়ে উপচে পড়ছে এবং অনেক ওষুধের দোকানে করোনার ওষুধের যোগান শেষ হয়ে গেছে।

চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিএফ পয়েন্ট সেভেন নামের একটি করোনাভাইরাস সাম্প্রতিক এই ঢেউয়ের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসটি করোনার সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের একটি উপপ্রজাতি।

এসএমডব্লিউ