যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (ফাইল ছবি)

ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি ‘মৃত’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত মাসে তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন এবং মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশের পর তার এই বক্তব্যটি সামনে আসে।

অবশ্য ওই ভিডিওতে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি ‘মৃত’ বলে আখ্যা দিলেও তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করবেন না বলে জানান বাইডেন। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

২০১৫ সালে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য ইরানের সঙ্গে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ছয় শক্তিধর দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো হচ্ছে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া।

কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।

এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মূলত ওয়াশিংটনকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। এমনকি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইরানকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।

পরে ২০২১ সালের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর এই চুক্তি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও এ নিয়ে ইরানের সঙ্গে এসব দেশের কয়েক দফায় আলোচনা হলেও নানা শর্তের বেড়াজালে তা এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে।

এএফপি বলছে, ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিকে ‘মৃত’ বলে বাইডেনের মন্তব্যের এই ভিডিওটি সত্যি বলে মনে হচ্ছে এবং এটি গত ৩ নভেম্বর জো বাইডেনের ক্যালিফোর্নিয়া সফরের সময় ধারণ করা হয়েছিল।

সেদিন মূলত ২০১৫ সালের জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) আর কার্যকর নয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এমন ঘোষণা দিতে বলেছিলেন একজন নারী। জবাবে বাইডেন ওই মন্তব্য করেন।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইরানের পতাকার রঙে চুলের ফিতা পরা এক নারী জো বাইডেনের সঙ্গে হ্যান্ডশেকের সময় বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন, আপনি কি দয়া করে ঘোষণা করতে পারেন যে, জেসিপিওএ মারা গেছে।’

জবাবে বাইডেন উত্তর দেন, ‘না’।

‘কেন না?’ পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন ওই নারী। জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি মারা গেছে, তবে আমরা এটি ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। এটা বেশ লম্বা ঘটনা।’

এসময় ওই নারী এবং তার পাশে থাকা অন্যরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তেহরান সরকারের সাথে চুক্তি না করার জন্য অনুরোধ করেন। ওই নারী দাবি করেন, ‘তারা (ইরান সরকার) আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।

পাশে থাকা অন্য এক ব্যক্তি বলেন, ‘তারা (ইরানি কর্তৃপক্ষ) আমাদের সরকার নয়।’

ভিডিও ফুটেজের শেষ পর্যায়ে বাইডেনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি জানি তারা আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে।’

এএফপি বলছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই মন্তব্য অস্বীকার করেনি হোয়াইট হাউস। আর ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন ইরান জেসিপিওএ পুনরুজ্জীবিত করার জন্য চুক্তির চূড়ান্ত শর্তগুলো মেনে নেওয়ার বিষয়ে কয়েক মাস চাপের কাছে মাথা নত করেনি।

মূলত ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ভিয়েনায় আলোচনা চলছে এবং এই বছরের শুরুর দিকে ইরান ও ওয়াশিংটন একটি চুক্তির অত্যন্ত কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।

তবে এরপর থেকে এ বিষয়ে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল গত সেপ্টেম্বরে সতর্ক করে বলেছিলেন, চুক্তির পক্ষগুলো আসলে ‘বিমুখ’ হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বাইডেনের এই ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, কেউ এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন এখনও জেসিপিওএ পুনরুজ্জীবিত করতে চায়, কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এটি এখন আর অগ্রাধিকার নয়।

কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জেসিপিওএ সম্পর্কে আমরা যা বলেছি তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের করা মন্তব্য অনেকটাই সঙ্গতিপূর্ণ। এটি এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাস নয়।’

তিনি বলেন, ‘ইরান চুক্তির ক্ষেত্রে এখন কোনও অগ্রগতি ঘটছে না। অদূর ভবিষ্যতে আমরা কোনও অগ্রগতিও আশা করছি না।’

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তার এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা খুব শিগগিরই এ নিয়ে কোনও চুক্তির আশা দেখতে পাচ্ছি না। কারণ ইরান তার নাগরিকদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে এবং রাশিয়ার কাছে ইউএভি বিক্রি করছে।’

টিএম