স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনই ক্যানসারে আক্রান্ত। এর মাঝেই সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। সন্তানধারণের সময় কেমোথেরাপি নিতে হয় স্ত্রীকে। প্রাণঘাতী এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের ওরচেস্টারশায়ার এই ঘটনাকে অনেকটা অলৌকিক বলছেন সেখানকার চিকিৎসকরা।

ওরচেস্টারশায়ার অ্যাকিউট হাসপাতাল এনএইচএস ট্রাস্ট ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে ওরচেস্টারশায়ারের বাসিন্দা জেমস আর বেথানির জীবনে ঝড় শুরু হয়। জেমসের হজকিন লিম্ফোমা ধরা পড়ে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিল তার। ক্যানসারের চিকিৎসা শুরুর আগেই সন্তান ধারণ করতে চেয়েছিল ওই দম্পতি।

পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেথানি জানতে পারেন, তিনি সন্তানসম্ভবা। এই খবরে দারুণ খুশি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। যখন তিনি ২১ সপ্তাহের গর্ভবতী, তখন তার শরীরেও ক্যানসার ধরা পড়ে। সেই সময় ক্যানসারের কেমোথেরাপি নিতে হয় সন্তানসম্ভবা বেথানিকেও।

হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিম শফিক বলেছেন, গর্ভবতী অবস্থায় নন-হজকিন লিম্ফোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল। এই ধরনের ঘটনায় প্রথমে রক্তের শ্বেতকণিকা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আমার ২৫ বছরের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতায় এই রোগে আক্রান্ত কোনও সন্তানসম্ভবা নারীর চিকিৎসা করিনি।

হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেমস তখন কেমোথেরাপি নিচ্ছিলেন। সে সময়ই ক্যানসার ধরা পড়ে বেথানির। তখন প্রথম ট্রিমেস্টার চলছিল তার। ভেবেছিলেন সন্তানধারণের উপসর্গ দেখা দিয়েছে শরীরে। তার কথায়, ‘মাথায় চাপ অনুভব করতাম। অসম্ভব মাথা যন্ত্রণা হতো। শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। কাজ করতে পারতাম না। ভাবতাম সন্তানধারণের কারণেই এমন হচ্ছে।’

চিকিৎসকরা যখন শিগগিরই কেমোথেরাপি নিতে হবে বলে জানান, তখন একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন বেথানি। তার স্বামীরও সে সময় কেমোথেরাপি চলছিল। চিকিৎসার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ার শঙ্কায় ছিলেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসক শফিক দ্রুত কেমোথেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন বেথানিকে।

শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কেমোথেরাপি নেওয়া শুরু করেন বেথানি। এর ফলে ঠিক সময়ে সুস্থ এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। বেথানি বলেন, ‘আমাদের জীবনের সব থেকে সুন্দর দিন, যখন হাইডি জন্মেছিল। চিকিৎসকরাও হাইডির সুস্থ অবস্থায় জন্ম নেওয়ার ঘটনাকে অলৌকিক বলেছেন।’

এসএস