ছবি : এবিসি

ইতিহাসে প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্বীকৃতি পেয়েছেন ইউরোপভিত্তিক কোম্পানি এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও শীর্ষ নির্বাহী বার্নার্ড আর্নল্ট। এতদিন বিশ্বের শীর্ষ ধনী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ইলন মাস্ককে পেছনে ফেলেছেন তিনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ মঙ্গলবার বার্নার্ড আর্নল্ট এবং ইলন মাস্কের সম্পদের একটি তুলনামূলক হিসেব দিয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, বর্তমানে মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার এবং আর্নল্টের সম্পদের পরিমাণ ১৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার।

অর্থাৎ হিসেব অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা, মহাকাশযানের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ প্রস্তুতকারী কোম্পানি স্পেসএক্স এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের স্বত্তাধিকারী ইলন মাস্কের চেয়ে ৭০০ কোটি ডলার বেশি সম্পদ নিয়ে তাকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করেছেন ফরাসি ব্যবসায়ী আর্নল্ট।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে— টেসলার শেয়ারের দরপতন এবং টুইটার সংক্রান্ত নানা গোলযোগের জেরে চলতি বছর মোট ১০ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন মাস্ক। মূলত এই কারণেই ধনী ব্যক্তিদের তালিকার শীর্ষ স্থান থেকে ছিটকে পড়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে চলতি ২০২২ সালে আর্নল্টের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭০০ কোটি ডলার কমলেও এ ঘাটতি তাকে শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে বাধা দেয়নি।

মঙ্গলবার বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকা ‘বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স’ প্রকাশ করে ব্লুমবার্গ। এই তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন বার্নার্ড আর্নল্ট। সবারই প্রশ্ন— কে তিনি?

১৯৪৯ সালে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় শহর রোবেইক্সের এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম হয় আর্নল্টের। তার পরিবারের ভবন নির্মাণের (কনস্ট্রাকশন) ব্যবসা ছিল। ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ইকোল পলিটেকনিক থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর পারিবারিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ফেররেট স্যাভিনেলে যোগ দেন আর্নল্ট। ১৯৭৮ সালে ওই কোম্পানির চেয়ারম্যান হন।

তার ছয় বছর পর, ১৯৮৪ সালে দেনার দায়ে প্রায় ডুবে যাওয়া টেক্সটাইল কোম্পানি ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর কিনে নেন আর্নল্ট। বিপুল পরিমাণ অপরিশোধ্য ব্যাংক ঋণের বোঝা থাকায় কোম্পানিটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল ফরাসি সরকার। তবে দেউলিয়া হয়ে পড়ললেও ফ্রান্সের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্র্যান্ড ছিল ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর।

দেনায় জর্জরিত ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর আর্নল্টের নেতৃত্বে ফের ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবং একসময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানি হিসেবে জায়গা করে নেয়। এলভিএমএইচের ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে ক্রিশ্চিয়ান ডায়োরকে তিনি পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি কোম্পানিতে রূপান্তর করেছেন।’

তারপর ১৯৮৯ সালে নিজের মালিকানাধীন কোম্পানি লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর, হাবলট এবং লে পার্সিয়ান নিয়ে গঠন করেন এলভিএমএইচ গ্রুপ অব কোম্পানিজ। গ্রুপের অধিকাংশ শেয়ারের মালিকানা নিজের হাতে রাখায় এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও শীর্ষ নির্বাহী হন আর্নল্ট। এখনও এই পদেই আছেন তিনি।

তিন দশকের বেশি সময় ধরে আর্নল্ট এলভিএমএইচ-কে বিলাসবহুল শৌখিন পণ্যের পাওয়ার হাউসে পরিণত করেছেন। শ্যাম্পেন, ওয়াইন, ফ্যাশনেবল পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ঘড়ি, গয়না, প্রসাধনী ও পারফিউম পণ্যের এক বিরাট সম্ভার এলভিএমএইচ। বর্তমানে সারাবিশ্বে এলভিএমএইচের সাড়ে ৫ হাজার শোরুম বা আউটলেট আছে।

ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি নয় ১৯৯২ সালে চীনের রাজধানী বেইজিংয়েও নিজেদের গ্রুপভুক্ত কোম্পানি লুই ভিটনের শোরুম খোলে এলভিএমএইচ। এভাবে এশিয়ার বৃহত্তম বাজারেও নিজের আধিপত্য জানান দেন ইউরোপের এই ধনকুবের।

ব্যক্তিজীবনে বার্নার্ড আর্নল্ট দু’বার বিয়ে করেছেন; তার ৫ সন্তান রয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুসারে, আর্নল্টের পরিবারের প্রত্যেকেই তার প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচ বা এর অন্তর্ভুক্ত কোনো ব্র্যান্ডের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

এসএমডব্লিউ