চীনের লকডাউনে এশিয়ার অর্থনীতিতে মন্দা
বিশ্ব বাজারে পণ্যের কম চাহিদা এবং চীনে কঠোর লকডাউনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে এশিয়ার বাজারে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছরের নভেম্বরে পুরো এশিয়ার অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত ও উৎপাদন কমেছে।
একটি জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থাটি বলছে, উৎপাদন কমে যাওয়ার এ বিষয়টি দেখাচ্ছে, আগামী বছর (২০২৩ সাল) এশিয়ার ক্রমহ্রাসমান অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
তারা আরও বলেছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ চীনে লকডাউনের কারণে আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায়, এ অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, নভেম্বরে চীনের কলকারখানাগুলোর কার্যক্রম অনেক কমেছে। জরিপের ফলাফলে বছরের শেষ চার মাসে দুর্বল চাকরির বাজার ও দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থাটি তুলে ধরা হয়।
এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো রপ্তানি-নির্ভর দেশের উৎপাদন কার্যক্রম সংকুচিত হওয়া এবং বিশ্বব্যাপী চাহিদা কমে যাওয়ায় ভিয়েতনামের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশ এর মূল্য দিচ্ছে বলে জরিপে ওঠে এসেছে।
জাপানে এ জরিপটি চালাতে সহযোগিতা করেছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টিলিজেন্স নামের একটি সংস্থা। তাদের কাছে অর্থনীতিবিদ লরা ডেনমান বলেছেন, ‘বাজার পরিস্থিতি ভালো না হওয়া, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং চাহিদা কম থাকার বিষয়টি আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য দায়ী।’
এদিকে চীনের কাইক্সিন/এসএন্ডপি গ্লোবাল ম্যানুফেকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্সের (পিএমআই) তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে অর্থনৈতিক সূচক ছিল ৪৯.৪। অক্টোবরে এটি ছিল ৪৯.২। নভেম্বরে সূচক বাড়লেও ৫০ এর ঘর ছুঁতে পারেনি। এ নিয়ে টানা চার মাস এ সূচকটি ৫০ এর নিচে রয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত আরেকটি জরিপের ফলাফলে জানা গিয়েছিল, এশিয়ার দেশটিতে গত সাত মাসের মধ্যে নভেম্বরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং উৎপাদন সবচেয়ে কমেছে। এরপরই চীনের পিএমআইয়ের সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেল।
জাপানের এইউ জিবুন ব্যাংকের প্রাইভেট মর্গেজ ইন্সুরেন্সের (পিএমআই) সূচক অক্টোবরে ছিল ৫০.৭। সেটি নভেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯.০তে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের পর যা প্রথম সংকোচনের ঘটনা।
অন্যদিকে এশিয়ার আরেক শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কলকারখানার কার্যক্রমও নভেম্বরে কমেছে। এ নিয়ে টানা পাঁচমাসের মতো দেশটির উৎপাদন নিম্নমুখী ছিল। তবে আগের চার মাসের তুলনায় নভেম্বরে তাদের উৎপাদনের পরিমাণ ভালো ছিল। ফলে ধারণা করা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনীতির খারাপ সময় হয়ত শেষ হয়েছে।
ত সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার প্রকাশিত অপর একটি তথ্যে দেখা গেছে, নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি বাজার গত আড়াই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অবনতি দেখেছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝেংঝৌ প্রদেশে কঠোর লকডাউন আরোপ করেছিল চীন সরকার। ওইখানে রয়েছে অ্যাপলের আইফোন উৎপাদনের সর্ববৃহৎ কারখানা। লকাডাউনের কারণে আইফোন উৎপাদনে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে।
চীনের লকডাউনের প্রভাব তাইওয়ান, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়াতেও পড়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
সূত্র: রয়টার্স
এমটিআই