উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ইরানের ভোরিয়া গাফৌরি জাতীয় সঙ্গীত শুনছেন। ছবিটি ২০১৮ সালের ১৯ মে তোলা

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে চলছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া ইভেন্ট উপভোগে সারা বিশ্বের নজর এখন কাতারে। অন্যদিকে ইরানে চলছে টানা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।

ইরানে চলমান এই বিক্ষোভের ছোঁয়া লেগেছে দেশটির ফুটবল দলেও। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মাঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া থেকে বিরত ছিলেন তারা। আর এই পরিস্থিতিতে ইরানের একজন নামকরা ফুটবলারকে আটক করেছে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) তাকে আটক করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং ভয়েস অব আমেরিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বৃহস্পতিবার দেশটির অন্যতম বিখ্যাত এক ফুটবলারকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ফুটবলারকে ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানো এবং জাতীয় বিশ্বকাপ দলকে দুর্বল করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, আটককৃত ওই ফুটবলারের নাম ভোরিয়া গাফৌরি। তিনি ইরানের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক সদস্য ও তেহরান ক্লাব এস্তেঘলালের অধিনায়ক ছিলেন। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে চলমান বিক্ষোভ ও ঘটনাপ্রবাহে কুর্দিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এই ফুটবলার।

এমনকি বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরবও হয়েছেন ভোরিয়া গাফৌরি। এখানে দেওয়া পোস্টে তিনি ইরানের সরকারকে কুর্দিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে বলেছেন। অবশ্য ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সমালোচনা করার দায়ে এর আগেও একবার তাকে আটক করা হয়েছিল।

এদিকে ইরানের সরকার সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশটির জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক সদস্য ভোরিয়া গাফৌরিকে সরকারের সমালোচনা করার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আধা-সরকারি ফার্স এবং বার্তাসংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া জাতীয় ফুটবল দলকে অপমান করা এবং সরকারের সমালোচনা করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গাফৌরিকে অবশ্য চলমান বিশ্বকাপে খেলার জন্য দলে নির্বাচিত করা হয়নি। তিনি তার পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে ইরানের কর্তৃপক্ষ এবং নীতির স্পষ্ট সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ইরান গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই বিক্ষোভ এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে ইরানের ইসলামি নেতৃত্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

মূলত গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। ২২ বছর বয়সী ইরানি কুর্দি এই তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।

মূলত এরপর থেকেই টানা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বিপর্যস্ত ইরান। ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ওই তরুণী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তবে ভুক্তভোগীর পরিবার এই বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেছে, তাকে নৈতিকতা পুলিশ মারধর করেছে।

এএফপি বলছে, নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী আমিনির মৃত্যুর পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয় তা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানের ক্ষমতাসীনদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

জাতি-গোত্র-সম্প্রদায়, সামাজিক শ্রেণী এবং প্রাদেশিক সীমানা পেরিয়ে ইরানের এই প্রতিবাদের ঢেউ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আর এই বিক্ষোভ দমনে ইরানি কর্তৃপক্ষ কঠোর ক্র্যাকডাউনের পথ বেছে নিয়েছে যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

চলমান বিশ্বকাপে শুক্রবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েলসের বিপক্ষে মাঠে নামবে ইরান।

টিএম