হোয়াসং-১৭ উত্তর কোরিয়ার এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র

আবারও আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নিক্ষেপ করেছে উত্তর কোরিয়া। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র উত্তর কোরিয়া ছুড়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বৃহস্পতিবার ছোট ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং একইদিন আঞ্চলিক নিরাপত্তা উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের ‘কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া’ সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়ার একদিন পর আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে পিয়ংইয়ং।

চলতি বছর উত্তর কোরিয়া রেকর্ডসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও রয়েছে এবং ওই পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়া চালানোর সময় সমুদ্রে শত শত আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে পিয়ংইয়ং। নিক্ষেপ করা এসব গোলাবারুদের কিছু জাপানের অংশেও পতিত হয়।

জাপানের কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের হোক্কাইডো অঞ্চল থেকে প্রায় ২১০ কিলোমিটার (১৩০ মাইল) পশ্চিমে সমুদ্রে পড়ে থাকতে পারে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে উত্তর কোরিয়ার বারবার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সহ্য করা যাবে না। তিনি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের অভ্যন্তরে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, আইসিবিএম হলো উত্তর কোরিয়ার দীর্ঘতম-পাল্লার অস্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো অবস্থান পর্যন্ত পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করার উপযোগী হিসেবে এটি ডিজাইন ও প্রস্তুত করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার, উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলে আরেকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের খবর দেয় দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। একইদিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি।

এদিন কোরীয় উপদ্বীপসহ এই অঞ্চলে নিরাপত্তা উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে মার্কিন প্রচেষ্টার ‘ভয়াবহ সামরিক প্রতিক্রিয়া’ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলোকে সতর্ক করে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ওয়াশিংটন এমন একটি পদক্ষেপ নিচ্ছে যার কারণে দেশটিকে ‘অনুশোচনা করতে’ হবে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের রক্ষার জন্য পদক্ষেপ যত জোরদার করবে এবং তারা যত বেশি উস্কানিমূলক ও ব্লাফিং সামরিক তৎপরতা বাড়াবে... উত্তর কোরিয়ার সামরিক প্রতিক্রিয়া ও জবাব ততই ভয়াবহ হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বেশ ভালোভাবেই সচেতন হবে যে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড আসলে জুয়া এবং এর জন্য ওয়াশিংটন অবশ্যই অনুশোচনা করবে।’

চলতি বছরের মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, ২০১৭ সালের পর থেকে প্রথম বারের মতো পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু পিয়ংইয়ং ঠিক কখন এই পদক্ষেপ নিবে বা পরীক্ষার প্রকৃত সময় এখনও অস্পষ্ট। 

রয়টার্স বলছে, উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) এমন এক সময়ে উৎক্ষেপণ করল যখন ইউক্রেনের যুদ্ধ, তাইওয়ান এবং কোরীয় উপদ্বীপের মতো উত্তেজনাকর ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপিএসি) শীর্ষ সম্মেলনের জন্য মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, আইসিবিএম হলো এমন ব্যালিস্টিক মিসাইল যার সর্বনিম্ন পাল্লা প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (৩৪০০ মাইল)। প্রধানত পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ডিজাইন করা হয়েছে। কিছু আইসিবিএম আবার ১০ হাজার কিমি (৬২০০ মাইল) বা তার বেশি দূরে আঘাত হানতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, আইসিবিএম বা ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বেরিয়ে ছুটতে পারে, আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র অধিবৃত্তাকার গতিপথ ধরে নিশানার দিকে ছুটে চলে।

পিয়ংইয়ংয়ের সবচেয়ে বড় আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হোয়াসং-১৭; যা ২০২০ সালে উন্মোচন করা হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি করে দেশটি।

টিএম