চীনে চাইনিজ-স্টাইলের গণতন্ত্র চলে: শি জিনপিং
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যার দেশ হচ্ছে চীন। একইসঙ্গে সারা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক শক্তিও বেইজিং। আর তাই এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা গণতন্ত্র নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের আগ্রহ রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে সমালোচনা ও নানা বিতর্কও।
তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলছেন, চীনে চাইনিজ-স্টাইলের গণতন্ত্র চলে, যেমনটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আমেরিকান স্টাইলের। গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে জিনপিং এই মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রায়শই বৈশ্বিক রাজনীতির বর্তমান অবস্থাকে একটি ‘ইনফ্লেকশন পয়েন্ট’ হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন। এর অর্থ, বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে এখন এমন এক মুহূর্ত চলছে যখন জনগণকে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা এবং একনায়কতন্ত্রের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে।
এমন অবস্থায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্প্রতি তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন শি জিনপিং। সম্ভব হলে তিনি হয়তো সারাজীবনই এই পদে থাকতে চান। চীনে ক্ষমতা কুক্ষিগত এবং জিনপিংয়ের আজীবন শাসক হওয়ার পরিকল্পনা (গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের) উদ্বেগ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।
আর এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে সোমবার বৈঠক করেন শি জিনপিং ও জো বাইডেন। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দুই দেশের নেতার বৈঠক সম্পর্কে চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তথাকথিত ‘গণতন্ত্র বনাম কর্তৃত্ববাদ’ আখ্যানটি আজকের বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে এমন কোনো বৈশিষ্ট্য নয়, এমনকি এটি বর্তমান সময়কে অতটা প্রতিনিধিত্বও করে না বলে বাইডেনকে জানিয়েছেন জিনপিং।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বৈঠকে শি জিনপিং উল্লেখ করেছেন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার মানবজাতি সাধারণভাবে অনুসরণ করে থাকে এবং এই বিষয়গুলোও চীনা কমিউনিস্ট পার্টি অবিরামভাবে অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান ধাঁচের গণতন্ত্র আছে। আর চীনে আছে চীনা ধাঁচের গণতন্ত্র।’
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি একদলীয় ব্যবস্থার প্রধান হিসেবে কাজ করেন যেটিকে অনেক মানবাধিকার গোষ্ঠী, পশ্চিমা নেতা এবং শিক্ষাবিদরা স্বৈরাচার বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কারণ যেকোনো একদলীয় ব্যবস্থায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, মুক্ত গণমাধ্যম বা জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে সর্বজনীন ভোটাধিকারের অভাব রয়েছে।
এছাড়া শি জিনপিং এবং তার দলের বিরুদ্ধে সমালোচনাকারীরা অনলাইনে সেন্সর এবং অফলাইনে আটকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। গত বছর বিশ্বের শতাধিক দেশকে নিয়ে ভার্চ্যুয়ালি গণতন্ত্র সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তবে সেই সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং সেই সময় চীনা কর্মকর্তারা এই সম্মেলনকে ‘বিভাজনকারী’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
এছাড়া ২০২১ সালের শেষের দিকে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিসট্যান্স বলেছে, বিশ্বের অনেক দেশে প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র হুমকির মুখে রয়েছে এবং এই সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।
টিএম