ছবি : বিবিসি

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ খেরসনের রাজধানী খেরসন সিটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে রাশিয়া। চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খেরসনের দখল নিয়েছিল রুশ বাহিনী।

বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।

ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন বুধবার বাহিনীর এক বৈঠকে বলেন, পর্যাপ্ত রসদ ও জনবলের অভাবে বর্তমানে খেরসন সিটিতে সেনা মোতায়েন রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না।

বিবিসির প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, ইউক্রেন বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে রাশিয়া।

খেরসন সিটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের অর্থ— ইউক্রেনের প্রধান নদী দানিপ্রোর পশ্চিমাঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে রুশ বাহিনী।

তবে রুশ বাহিনীর এই পদক্ষেপ তাদের রণকৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিতও হতে পারে। কারণ বুধবারের বৈঠকে জেনারেল সুরোভিকিন বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমার মতে সবচেয়ে বিচক্ষণ ও আদর্শ বিকল্প হলো, দানিপ্রো নদী ও তার যেসব এলাকা এখনও রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে, সেসব এলাকায় নতুন করে সেনাদের সংগঠিত করা।’

বুধবার খেরসনের রুশপন্থী উপনেতা কিরিল স্ট্রেমৌসভ এক গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এটি অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয় যে, এটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে ছয় দিন আগে স্ট্রেমৌসভ রুশ বাহিনীকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছিলেন, দানিপ্রোর পূর্বাঞ্চলে রাশিয়াকে সেনা সমাবেশ বাড়াতে হতে পারে।

কিরিল স্ট্রেমৌসভের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দানিপ্রোর পশ্চিম তীর থেকে সেনাদের সরিয়ে নিল রুশ কমান্ড। 

তবে সেনা প্রত্যাহারের কয়েক দিন আগে থেকেই দানিপ্রোর পশ্চিম তীর অঞ্চল থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছিল রুশ বাহিনী। সে সময় ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এর নিন্দা জানিয়ে বলেছিল, খেরসনের জনগণকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করা হচ্ছে।

তবে সেনা প্রত্যাহারের কয়েক দিন আগে থেকেই দানিপ্রোর পশ্চিম তীর অঞ্চল থেকে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছিল রুশ বাহিনী। সে সময় ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এর নিন্দা জানিয়ে বলেছিল, খেরসনের জনগণকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করা হচ্ছে।

একসময়ের সাবেক সোভিয়েত রাজ্য ইউক্রেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৯১ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর। তবে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটিতে শুরু হয় জাতিগত দ্বন্দ্ব।

ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ ইউক্রেনীয়, বাকি ৩০ শতাংশ রুশ জাতিগোষ্ঠীর। রুশ জাতিগোষ্ঠীর লোকজন বরাবরই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়, অন্যদিকে ইউক্রেনীয়রা চায় নিজেদের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে।

দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতে ইউক্রেনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তারপর ২০১৪ সালে রুশ বাহিনীর সহায়তায় কৃষ্ণ সাগরের উপকূলবর্তী ক্রিমিয়া দ্বীপ দখল করে রাশিয়া।

রাশিয়ার কাছে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদবির শুরু করে ইউক্রেন। এই নিয়ে দীর্ঘদিন মস্কোর সঙ্গে দ্বন্দ্বও চলেছে কিয়েভের।

সেই দ্বন্দ্বের জেরেই চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীকে ইউক্রেনে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর নির্দেশ দেয় রাশিয়া। সেই অভিযানে ইউক্রেনের প্রথম যে প্রদেশটি রুশ বাহিনীর দখলে আসে, তার নাম খেরসন।

সামরিক অভিযানের সাত মাস পর, ৩০ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ নিজের সীমানাভুক্ত করে রাশিয়া। এই চার প্রদেশ হলো— খেরসন, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক ও ঝাপোরিজ্জিয়া।

এসএমডব্লিউ