পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধ বন্ধে তাইগ্রে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছেছে দেশটির সরকার। দক্ষিণ আফ্রিকায় ইথিওপিয়ার এই সংঘাত নিয়ে আলোচনা শুরুর কয়েক দিন পর বিদ্রোহীদের সাথে সরকারের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

দুই বছর ধরে তাইগ্রে বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইথিওপিয়ার সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ চলছিল। এ সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। চলমান সংঘাতে দেশটিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বন্ধে চুক্তি হয়।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, শান্তি চুক্তিটিকে ‘নতুন সূর্যোদয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)। এ চুক্তির পর তাইগ্রে অঞ্চলে এখন মানবিক সহায়তা সরবরাহ শুরু হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), তাইগ্রে অঞ্চলে থাকা সাধারণ মানুষের মধ্যে ৯০ ভাগেরই জরুরিভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এ অঞ্চলের চারভাগের তিন ভাগ শিশু বর্তমানে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।

এই শান্তি চুক্তিকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হলেও এটিকে কিছুটা সতর্কতার সাথে নেওয়ার কথা বলছে বিবিসি। কারণ ইথিওপিয়ায় যুদ্ধ বন্ধে এটিই প্রথম শান্তি চুক্তি নয়। এর আগেও দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠী ও সরকারের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই গত আগস্টে দু’পক্ষ সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে।

তবে এবারের চুক্তিটি কিছুটা শক্তভাবেই করা হয়েছে। ইথিওপিয়ার সরকারি কর্মকর্তা এবং তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের প্রতিনিধিরা নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা এবং খাদ্য সহায়তাসহ জরুরি সেবা পুনর্বহাল করার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ চুক্তিটিকে ‘বিরাট’ সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এটি কার্যকরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা জানিয়েছেন। নাইজেরিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলুসেগুন ওবাসানজো এ চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় কয়েক সপ্তাহব্যাপী চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। ওলুসেগুন ওবাসানজো বলেছেন, এটি শান্তি প্রক্রিয়ার শুরু।

জাতিসংঘের মহাসচি অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘এটি প্রথম ধাপ’, যার মাধ্যমে আমরা আশা করতে পারি যে লাখ লাখ ইথিওপিয়ান এ দ্বন্দ্বের মধ্যে কষ্ট করেছেন তারা শান্তি পাবেন।

তাইগ্রে অঞ্চলটি গত দুই বছর ধরে বহিঃবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। হাসপাতালে ওষুধ নেই। বিদ্যুৎ, ফোন, ব্যাংকিং সেবা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

সরকার ও এবং তাইগ্রে বিদ্রোহী দু’পক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তাইগ্রে ও ইথিওপিয়ার সরকারি বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় ২০২০ সালের ৪ নভেম্বরের একটি ঘটনা নিয়ে।

এদিন তাইগ্রের ক্ষমতাসীন দলের প্রতি অনুগত বাহিনী, তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট সেনাবাহিনীর একটি ব্যারাকে আক্রমণ করে। এর জবাবে ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী তাইগ্রে দখল করে। যদিও পরবর্তীতে তাদের পিছু হটতে বাধ্য করা হয়।

সূত্র: বিবিসি।

এমটিআই