অবশেষে মুখ খুললেন বলসোনারো
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে হারিয়ে প্রবীণ বামপন্থি রাজনীতিক লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা আবারও ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা গ্রহণ করবেন তিনি।
গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘অপ্রত্যাশিত’ জয় পান লুলা দা সিলভা। লুলার বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পর চুপ হয়ে যান ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। নির্বাচনের প্রায় ৪৪ ঘণ্টা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি তিনি। কেন বলসোনারো চুপ হয়ে আছেন? কেন মুখ খুলছেন না? এ নিয়ে চলছিল জল্পনা-কল্পনা।
বিজ্ঞাপন
অবশেষে নীরবতা ভেঙে মুখ খুলেছেন বলসোনারো। ধারণা করা হচ্ছিল পরাজয় মেনে নিয়ে সদ্যই নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লুলাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। তবে এমন কিছু করেননি তিনি। মঙ্গলবার রাজধানী ব্রাসিলিয়ার আলভোরোদা প্রাসাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলসোনারো বলেন, ‘আমাদের স্বপ্নগুলো আগের চেয়ে আরও বেশি প্রাণবন্ত।’
নিজের বক্তব্যে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লুলার বিষয়ে একটি কথাও বলেননি তিনি। এমনকি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছেন কিনা তাও বলেননি। নির্বাচনে যে ৫ কোটি ৮০ লাখ ভোটার তাকে ভোট দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলসোনারো। কিন্তু বাকি যে ৬ কোটি মানুষ লুলাকে ভোট দেননি তাদের বিষয়ে কোনও কিছু বলেননি।
তবে অস্পষ্টভাবে বলসোনারো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এবং নাগরিক হিসেবে আমাদের সংবিধানের নির্দেশ মেনে চলব।
বলসোনারো হেরে যাওয়ার পর তার সমর্থকরা বিশেষ করে ট্রাক চালকরা ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তা অবরোধ করেছিল। তাদের দাবি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বলসোনারো আন্দোলনরত ট্রাকচালকদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার ফলই এ আন্দোলন।
এদিকে, বলসোনারো তার বক্তব্য শেষ করার পর কথা বলেন তার চিফ অব স্টাফ সিরো নোগোইরা। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন না তারা।
নোগোইরা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বলসোনারো আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, যখন আইন অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে; তখনই আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করব।’
দেশটির রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থমাস ট্রমান বলেছেন, চিফ অব স্টাফ সিরো নোগোইরা যে কথা বলেছেন তা বোঝাচ্ছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় মেনে নিয়েছেন বলসোনারো এবং আগামী বছর (১ জানুয়ারি) ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন ক্ষমতা ছাড়ার পর বলসোনারোর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সংক্রান্ত, অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম, দুর্নীতির অভিযোগ এবং করোনা মহামারিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে অসংখ্য তদন্ত ও অভিযোগ দায়ের হতে পারে।
বিশ্লেষক থমাস ট্রমান বলেছেন, তিনি (বলসোনারো) জেলে যাওয়ার জন্য ভীত। তাই এখন যে চেষ্টা করছেন তা হলো আলোচনা, তার শেষ উপায় হিসেবে এটিই অবশিষ্ট রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের অন্তত ছয়জন সদস্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বসেছিলেন বলসোনারো। ব্রাজিলের বিশিষ্ট রাজনৈতিক সাংবাদিক গুইলহারম আমাদো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনা করছেন তিনি অনুরোধ করবেন ‘যখন তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন তখন তিনি এবং তার পরিবারের কোনও সদস্যকে যেন বিচারের মুখোমুখি না করা হয়।’
অন্যদিকে, মঙ্গলবার ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট রাস্তা অবরোধকারী বলসোনারের ট্রাক ড্রাইভার সমর্থকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছে।
আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব ট্রাক দিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে, সেগুলো যদি রাস্তার ওপর থাকে তাহলে সেসব ট্রাকের মালিকদের প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করা হবে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
এমটিআই