দিনে ৪৫ কেজি প্লাস্টিক খায় নীল তিমি : গবেষণা
বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ প্রাণী নীল তিমি। এগুলোর খাবার খাওয়ার ধরনও এমন বিশালই। প্রতিদিনই প্রাণীটি গলাধঃকরণ করে টন টন খাবার। তাদের প্রধান খাবার হলো চিংড়ি সদৃশ্য কিরিল। তাছাড়া অন্যান্য জলজ প্রাণীও খেয়ে থাকে তারা।
তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নীল তিমি এখন প্লাস্টিকও খাচ্ছে। সাগর প্লাস্টিকের ছোট ছোট দানায় ভরপুর হয়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে। গবেষণা থেকে যে ভয়ঙ্কর তথ্য পাওয়া গেছে সেটি হলো নীল তিমি দিনে ৪৫ কেজির মতো প্লাস্টিক খাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক উপকূলে বেলিন জাতের তিমি — নীল, ফিন এবং হাম্পব্যাক — এ তিন প্রজাতির ওপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষণা করা হয় কত পরিমাণ প্লাস্টিক তিমিগুলো খাচ্ছে। মঙ্গলবার এ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে এসব সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলোর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিষয় নিয়ে বিষদ আলোচনা করা হয়।
বালিন জাতের তিমি হলো ফিল্টার-ফিডার। এ জাতের তিমি সমুদ্রের পানি থেকে চিংড়ির মতো ক্রাস্টেসিয়ান বা কিরিল ও অন্যান্য ছোট শিকার খায়। খাবার খেতে তারা ব্যবহার করে মুখের ভেতর থাকা কেরাটিনের তৈরি বালিন প্লেট। কেরাটিন নামের পদার্থটি মানুষের হাতের নখে পাওয়া যায়।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী নীল তিমি প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি মাইক্রোপ্লাস্টিক খাচ্ছে। যা প্রায় ৪৫ কেজির সমান। অন্যদিকে ফিন তিমি প্রতিদিন খাচ্ছে ৬০ লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক। যা প্রায় ২৫ কেজির সমান। ফিন তিমিরও প্রধান খাবার হলো কিরিল।
হাম্পব্যাক তিমি মূলত কিরিল খায়। কিন্তু কিছু হাম্পব্যাক আবার ছোট মাছও খেয়ে থাকে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য মতে যেগুলো কিরিল খায় সেগুলো প্রতিদিন ৪০ লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক ভক্ষণ করে থাকে। যা প্রায় ১৭ কেজির সমান।
গবেষকরা এ তথ্য পেতে ১২৬টি নীল তিমি, ৬৫টি হাম্পব্যাক তিমি এবং ২৯টি ফিন তিমির ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। এ গবেষণায় তারা ব্যবহার করেছেন ইলেকট্রনিক ট্যাগ ডিভাইস সাকশন-কাপড। এটি তিমিগুলোর পেছনে যুক্ত করা হয়েছিল। এগুলোতে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, জিপিএস লোকেটার এবং গতিবিধির ওপর নজর রাখে এমন একটি যন্ত্র ছিল।
গত বছর একই তিমির ওপর প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, নীল তিমি প্রতিদিন ১০-২০ টন কিরিল খায়। ফিন তিমি খায় ৬-১২ টন কিরিল। অন্যদিকে হাম্পব্যাক তিমি খায় ৫-১০ টন কিরিল অথবা ২-৩ টন মাছ।
নতুন গবেষণায় পাওয়া গেছে তিমিরা ১৬৫-৮২০ ফুট গভীরে সবচেয়ে বেশি খাবার খেয়ে থাকে। আর কাকতালীয়ভাবে এখানেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো প্লাস্টিক বর্জ্যের ছোট ছোট দানা। এগুলো ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট। শিল্প বর্জ্য ও অন্যান্য পণ্য থেকে এগুলো তৈরি হয়। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সমুদ্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়েছে। এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক খাওয়ার ফলে তিমির স্বাস্থ্যগত দিকটির ওপর কি ধরনের প্রভাব পড়ছে তা পরিষ্কার না।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিরিল কাহানে-রাপোর্ট বলেছেন, এটি আমাদের গবেষণার প্রধাণ লক্ষ্যবস্তু নয়। আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে যদি প্লাস্টিকের সাইজ ছোট হয় তাহলে এটি পেটের ভেতর দিয়ে গিয়ে ভেতরের অন্যান্য অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যদিও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের বিষয়টি পরিষ্কার নয়। প্লাস্টিক থেকে রাসায়নিকও নির্গত হতে পারে যেগুলো অন্ত:স্রাবীর ক্ষতি করতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স
এমটিআই