অক্টোবরের শুরুতে কিয়েভের রাস্তায় রাশিয়ার মিসাইল হামলার পর বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে যায় (ফাইল ছবি)

ইউক্রেনজুড়ে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে রাশিয়া। সোমবার (৩১ অক্টোবর) দেশটির রাজধানী কিয়েভে ফের দফায় দফায় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। মূলত এদিন সকাল থেকেই ধরাবাহিক বিস্ফোরণের কেঁপে ওঠে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির রাজধানী।

অন্যদিকে কিয়েভ ছাড়াও ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলেও ব্যাপক রুশ মিসাইল হামলার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার অভিযোগে খাদ্যশস্য রপ্তানির বিষয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত খাদ্যশস্য চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পর রুশ এই হামলার তথ্য সামনে এলো। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে এবং ইউক্রেনীয় শস্যের পরিবহনে রাশিয়ার আরোপিত অবরোধ এই বছরের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের সৃষ্টি করেছিল।

রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকালে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। একইসময়ে ইউক্রেনের উত্তর, পূর্ব ও মধ্য ইউক্রেনীয় এলাকাগুলোর আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে।

রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। মূলত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে গত ৮ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগুলোতে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে কিয়েভে ১০ টিরও বেশি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পাশাপাশি শহরের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। এছাড়া বিস্ফোরণের পর শহরের বেশ কিছু অংশে বৈদ্যুতিক সেবার পাশাপাশি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে খারকিভের মেয়র ইহোর তেরেখভ বলেছেন, তার শহরে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। যার মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো স্থাপনা’ লক্ষ্য করে আঘাত হানে। এছাড়া জাপোরিঝিয়া এবং চেরকাসি শহরেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়ারমাক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘রাশিয়ান হামলাকারীরা বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।’

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ‘রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোতে আরেকদফা আঘাত করেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করার পরিবর্তে, রাশিয়া বেসামরিকদের সাথে লড়াই করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আক্রমণগুলোকে (কোনো হামলার) ‘জবাব’ বলে ন্যায্যতা দেওয়া যাবে না। রাশিয়া হামলা করেছে, কারণ দেশটির কাছে এখনও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে এবং ইউক্রেনীয়দের হত্যা করার ইচ্ছা আছে।’

এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেনকো বলেছেন, সোমবার রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিয়েভ এবং অন্যান্য শহরের জ্বালানি অবকাঠামোতে আঘাত করেছে। যার ফলে বিদ্যুৎ ও পানি বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া শান্তি আলোচনায় আগ্রহী নয়, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায়ও আগ্রহী নয়। পুতিনের একমাত্র লক্ষ্য মৃত্যু ও ধ্বংস।’

অবশ্য সোমবারের এই হামলা নিয়ে মস্কোর কাছ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এর আগে অক্টোবর মাসের শুরুতে ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক মিসাইল হামলা চালায় রুশ বাহিনী। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী সেতুতে ভয়াবহ হামলার জবাবে সেসময় পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বিভিন্ন শহরে কার্যত মিসাইল বৃষ্টি চালায় রাশিয়া।

ওই ঘটনায় অন্তত ১৪ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক আহত হন বলে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।

টিএম