বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্যশস্য রপ্তানির বিষয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত খাদ্যশস্য চুক্তি স্থগিত করেছে রাশিয়া। অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের বৃহত্তম বন্দরনগরী সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার অভিযোগে ওই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মস্কো।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, শনিবার রুশ নৌবহরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার অভিযোগে খাদ্যশস্য চুক্তি থেকে মস্কোর বেরিয়ে যাওয়ার এই ঘোষণা বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট প্রশমনের প্রচেষ্টায় বড় ধরনের ধাক্কা তৈরি করবে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, শনিবার ভোররাতে ইউক্রেন ১৬টি ড্রোন দিয়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেভাস্তোপলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে রুশ নৌবহরে হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‌বিশেষজ্ঞরা এই সন্ত্রাসী হামলা চালাতে সহায়তা করেছে।

রাশিয়া বলেছে, কৃষ্ণ সাগর বন্দর থেকে ইউক্রেনের শস্য করিডোর নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত জাহাজগুলোর একটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনীয় এই ড্রোন হামলা প্রতিহত করেছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বন্দর থেকে কৃষি পণ্য রপ্তানির চুক্তি বাস্তবায়‌নে রাশিয়ার অংশগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

হামলার কারণে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণ সাগরের বন্দর থেকে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি কমে যাবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মস্কো।

এদিকে, শনিবার ব্রিটেন বলেছে, গত মাসে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা উড়িয়ে দিয়েছে বলে যে অভিযোগ করেছে মস্কো, তা পুরোপুরি মিথ্যা। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ অন্যদিক ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মস্কো এই ভুয়া অভিযোগ করেছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‌‘নিজেদের স্থাপনায় কাল্পনিক সন্ত্রাসী হামলার’ নাটক সাজানোর অভিযোগ করেছেন। আর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, চুক্তি নস্যাতের জন্য মিথ্যা অজুহাতকে ব্যবহার করছে রাশিয়া।

বিশ্বের অন্যতম দুই প্রধান খাদ্য ও জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বৈশ্বিক এই সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত ২২ জুলাই কিয়েভ এবং মস্কোর কর্মকর্তারা ইউক্রেনে আটকা আড়াই কোটি টন গম ও ভুট্টা বিশ্ববাজারে সরবরাহের লক্ষ্যে তুরস্কে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

চুক্তির ফলে ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু হওয়ায় বৈশ্বিক খাদ্য সংকট এবং বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম কমবে বলে আশা করা হয়। চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির কাজ তদারকির জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র (জেসিসি) চালু করা হয়।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেনে আটকা শস্য বহনকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ যেন নিরাপদে কৃষ্ণসাগরে চলাচল করতে পারে, সেজন্য তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়। সেই কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘ, রাশিয়া ও তুরস্ক।

কূটনীতিকদের মতে, চুক্তিতে ট্রানজিটে থাকাকালীন কোনও চালান অথবা বন্দরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়া। যদিও চুক্তি স্বাক্ষরের পরদিনই ওডেসা বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। অন্যদিকে, ইউক্রেন মাইন পেতে রাখা সাগর দিয়ে কার্গো জাহাজ পরিবহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই চুক্তিতে পৌঁছাতে সময়ে লেগেছে প্রায় দুই মাস, আর এই চুক্তির স্থায়িত্ব হওয়ার কথা ১২০ দিন। তবে উভয়পক্ষ রাজি থাকলে চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছিল।

রাশিয়ার অবরোধের কারণে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গম-ভিত্তিক তৈরি রুটি এবং পাস্তার মতো অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রান্নার তেল এবং সারের দামও বিশ্বজুড়ে বেড়েছে।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।

এসএস