ক্ষমতায় টিকে থাকতে বাজওয়ার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইমরান
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছিল। সেসময় নানা নাটকীয়তার মধ্যে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা হারায় পিটিআই সরকার।
ধারণা করা হয়, ইমরানের সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাত ছিল। আর তাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইমরান।
বিজ্ঞাপন
সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার নিজেই এই কথা স্বীকার করেছেন। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান স্বীকার করেছেন, তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মূলত তৎকালীন বিরোধীরা যখন তার সরকারের পতনের জন্য ‘ষড়যন্ত্র’ করছিল, সেসময় এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইমরান।
চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে দিনভর নানা নাটকীয়তা এবং মধ্যরাতে সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদত্যাগের পর অনাস্থা ভোটে হেরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ইমরান খান। দেশটির ৩৪২ সদস্যের সংসদের ১৭৪ জনই ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।
ক্ষমতা হারানোর একদিন পর ইমরান খান তার ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে প্রথমবার মুখ খোলেন। সেসময় তিনি বলেন, শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে।
দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়। কিন্তু শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ আবার পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান আরও বলেছিলেন, দেশের জনগণই সবসময় তাদের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা করে। এরপরই ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় পিটিআই।
মূলত এরপর থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে আসছেন ইমরান খান। এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলে টানা অভিযোগ করে আসছেন। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম নাজুম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই বছরের মার্চের শুরুতে তার সামনেই সেনাপ্রধান বাজওয়ার মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্ধিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মূলত এরপরই বিষয়টি স্বীকার করে নেন ইমরান।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বারবার জেনারেল বাজওয়াকে সতর্ক করে দিয়েছি, যদি (পিটিআই সরকারের বিরুদ্ধে) আনা অনাস্থা প্রস্তাব সফল হয় তবে এটি পাকিস্তানের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে এবং কেউ এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’
ইমরান আরও বলেন, তিনি সেনাপ্রধানকে (জেনারেল বাজওয়া) বলেছিলেন- তৎকালীন বিরোধীরা যদি তাকে তার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় তবে তিনি তা করতে পারেন।
তবে অরাজনৈতিক সামরিক প্রতিষ্ঠান হয়েও আইএসআইয়ের রাজনৈতিক সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ইমরান খান। একই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তারা অরাজনৈতিক হলে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কেন সংবাদ সম্মেলন করেছেন?’
পৃথক এক বক্তব্যে ইমরান খান পুনর্ব্যক্ত করেন, ‘মীর জাফর এবং মীর সাদিক’ তার সরকারের পতনের জন্য বিদেশিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। পাকিস্তানের ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চের প্রাক্কালে দেওয়া এক একটি ভিডিও বিবৃতিতে জনগণকে দেশের প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য তার আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
দলের সোশ্যাল মিডিয়া টিমকে ইমরান বলেছেন, ‘মীর জাফর এবং মীর সাদিক আমার সরকারের পতনের জন্য বিদেশিদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, প্রতিটি নাগরিককে দেখান তারা পিটিআই সরকারের সাথে কি করেছে।’
ভিডিও বিবৃতিতে ইমরান আরও বলেছেন, তিনি শুক্রবার লাহোরের লিবার্টি চক থেকে তার ‘হাকিকি আজাদী’ আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছেন। আর এতে অংশ নেওয়ার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় যেতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের দরজা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পিটিআই প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে। ন্যায়বিচার হওয়া উচিত। আইনের সামনে সবাইকে সমান হতে হবে।’
টিএম