চাদে গণতান্ত্রিক শাসনের দাবিতে বিক্ষোভ-সহিংসতা, নিহত ৫০
মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদে বিক্ষোভ-সহিংসতায় প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০০ জন। অগণতান্ত্রিক শাসন বিলুপ্ত করে দ্রুত গণতান্ত্রিক শাসনে ফেরার দাবিতে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) শত শত লোক বিক্ষোভ শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
আর এতেই হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ-সহিংসতার পর এক সংবাদ সম্মেলনে নিহতের সংখ্যা জানিয়েছেন চাদের প্রধানমন্ত্রী সালেহ কেবজাবো। বৃহস্পতিবারের এই ঘটনাকে তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এবং সরকার এখনও হতাহতের সংখ্যা সংগ্রহ করছে বলেও জানিয়েছেন।
কিন্তু মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, বিক্ষোভকারীরা নিরস্ত্র ছিল এবং রাজধানী এন’জামেনাসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভরত বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
রয়টার্স বলছে, মধ্য আফ্রিকার বিশাল এই দেশটি ২০২১ সালের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস ডেবির মৃত্যুর পর থেকেই মূলত সংকটে রয়েছে এবং দেশটি এখন সামরিক বাহিনী পরিচালনা করছে। মৃত্যুর আগে টানা তিন দশক কঠোরভাবে দেশ শাসন করেছিলেন ইদ্রিস ডেবি।
অবশ্য ইদ্রিস ডেবির মৃত্যুর পর তার পুত্র মহামত ইদ্রিস ডেবি সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে প্রাথমিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ১ অক্টোবর তিনি সেই নির্বাচন দুই বছর পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
রয়টার্স বলছে, বিরোধী দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের ডাক দেয়। মূলত প্রাথমিকভাবে সম্মত হওয়া ১৮ মাসের ট্রানজিশন পিরিয়ডের সমাপ্তি উপলক্ষেই এই বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সরকার আগেই সেই বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে।
তবে বিক্ষোভকারীরা খুব সকালে রাস্তায় নেমে আসেন। পরে তারা রাস্তায় ব্যারিকেড দেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীর দলীয় সদর দপ্তরে অগ্নিসংযোগ করেন। মূলত ইদ্রিস ডেবির সরকারের সাবেক বিরোধী সালেহ কেবজাবোকে গত সপ্তাহে নতুন ‘ঐক্য সরকারের’ প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয়।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আজ যা ঘটেছে তা হলো- শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জন্য একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থান এবং এই সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা বিচারের মুখোমুখি হবে।’
কেবজাবো দাবি করেন, ‘বিক্ষোভকারীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল এবং তারা বিদ্রোহী বলে বিবেচিত হবে। নিরাপত্তা বাহিনী শুধুমাত্র আত্মরক্ষায় জবাব দিয়েছে।’
অবশ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস এবং চাদে তাদের অংশীদার সংস্থাগুলো বলেছে, বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভ নিরাপত্তা বাহিনী সহিংসভাবে দমন করেছে। এমনকি বিক্ষোভে তাজা গুলিবর্ষণ, নির্যাতন এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক আবদৌলায়ে দিয়ারা বলেছেন, সাক্ষীদের বিবরণ এবং এদিনের ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর তাজা গুলি ব্যবহার করেছে বলে দেখা গেছে।
টিএম