ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন কে?
ব্রিটেনের পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। দেশটিতে আগামী দুই বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ডাউনিং স্ট্রিটে বিপর্যয়কর ছয় সপ্তাহ পর তিনি দীর্ঘসময় ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন কিনা সেটি নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লিজ ট্রাস যদি ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন, তাহলে তার স্থলাভিষিক্ত হিসাবে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? নতুন প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে আছেন কারা, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
বিজ্ঞাপন
ঋষি সুনাক
টরিদের নেতা নির্বাচনে চলতি গ্রীষ্মেই সাবেক এই ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রীকে একেবারে সহজেই হারিয়েছেন লিজ ট্রাস। সরকারের ব্যয়ে লাগাম টানা ছাড়াই কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলীয় সদস্যদের মন জয় করেন তিনি।
৪২ বছর বয়সী সুনাক অবশ্য বারবার সতর্ক করে দিয়ে লিজ ট্রাসের অতিরিক্ত ঋণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনাকে ‘বেপরোয়া’ বলে অভিহিত করেছেন। আর এটি কয়েক দশকের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে বাজারের আস্থাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
এখন ঋষি সুনাকের এসব সতর্কবাণী পুরোপুরি সঠিক প্রমাণিত হয়েছে এবং ট্রাস তার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। লিজ ট্রাস তার অর্থমন্ত্রীকে সরিয়ে সুনাক-সমর্থিত জেরেমি হান্টকে নতুন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন। যে কারণে কেউ কেউ মনে করছেন ট্রাসের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে সেরা কনজারভেটিভ এমপি হতে পারেন ঋষি।
সাম্প্রতিক নেতা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রাথমিক পর্বে ঋষি সুনাক সর্বাধিক টরি আইনপ্রণেতাদের সমর্থন পেয়েছিলেন এবং এখনও সংসদীয় দলটির মধ্যে তার প্রতি যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হয়।
মঙ্গলবার ইউগভের এক জরিপে দেখা যায়, প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প প্রতিদ্বন্দ্বী যারা আছেন, তাদের মধ্যে ট্রাসের রেটিং বেশি। যদিও এখনও তার সামগ্রিক রেটিং ১৮। তবে এখনও তাকে বিভাজন সৃষ্টিকারী রাজনীতিক হিসাবে দেখা হয়।
কনজারভেটিভ পার্টির অনেক সদস্য রয়েছেন, যারা দলীয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন; তাদের অনেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ঋষি সুনাকের ভূমিকার কট্টর সমালোচক। জনসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তারা ঋষি সুনাককে ক্ষমা করতে রাজি নন।
বরিস জনসন
গত মাসের শুরুর দিকে মন্ত্রিসভা এবং টরি এমপিদের বিদ্রোহের পর ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন ব্রিটেনের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সুনাকের পদত্যাগের মাধ্যমে সরকারে শুরু হওয়া অস্থিতিশীলতা অন্য এমপিদেরও একই পথে হাঁটতে উসকানি দেয়। যে কারণে কয়েক মাসের বিতর্কের পর জনসন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নেন।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় জনসন পুনরায় ক্ষমতায় ফিরতে পারেন— এমন ইঙ্গিতও মিলছে। আর জনসনও চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করতে পারেন বলে ব্রিটেনে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে এত দ্রুত এটি সম্ভব নাও হতে পারে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন।
কনজারভেটিভ এমপি এবং পার্টির একাংশের মধ্যে এখনও ব্রেক্সিটের অন্যতম এই সমর্থকের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু তিন বছরের ক্ষমতার মেয়াদের সময় নানা ধরনের কেলেঙ্কারি আর কলঙ্কে জর্জরিত তার ভাবমূর্তি ভোটারদের কাছে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার ইউগভের জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ বছর বয়সী সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয়তায় লিজ ট্রাসের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন। তবে জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ তার সম্পর্কে বৈরী মত দিয়েছেন।
পদত্যাগের পর থেকে জনসনকে খুব বেশি প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে অর্থের বিনিময়ে বক্তৃতা করেছেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাজ্যে চলমান সংকটের বিষয়ে তার মতামতের কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি সেই বক্তৃতায়।
জেরেমি হান্ট
টরিদের দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে অতীতে দু’বার প্রার্থী হয়েছিলেন লিজ ট্রাসের নতুন নিয়োগকৃত অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। ২০১৯ সালে চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতায় হেরে যান তিনি। আর চলতি বছরে নেতৃত্ব নির্বাচনে এমপিদের প্রথম ভোটাভুটিতে সর্বশেষ অবস্থানে ছিলেন তিনি।
কিন্তু সরকারের দ্বিতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী পদে নিয়োগ সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজনীতির খাদের কিনার থেকে কেন্দ্রীয় মঞ্চে ফিরিয়ে এনেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত তিনি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে তার অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে।
কনজারভেটিভ দলীয় এমপিরা লিজ ট্রাসকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করছেন। অনেকেই ধারণা করছেন, সাবেক উদ্যোক্তা জেরেমি হান্টের প্রতি কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যপন্থী অংশের সর্বাধিক সমর্থন রয়েছে। তিনি দলটির একজন ‘যোগ্য ঐক্যের প্রার্থী’ হিসাবে আবির্ভূত হতে পারেন।
তবে ৫৫ বছর বয়সী এই এই রাজনীতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট কম পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেরেমি হান্ট নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি উঠতে পারে। এর ফলে বর্তমান ভোটের ওপর ভিত্তি করে টরিদের ভূমিধস পরাজয়ের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
পেনি মর্ডান্ট
ব্রিটেনের বর্তমান মন্ত্রিসভার এই সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনসনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে অনেকের প্রাথমিক পছন্দের তালিকায় ছিলেন। সুনাকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তিনি। ট্রাসকে পরাজিত করার ৮ ভোটের মধ্যে চলে এসেছিলেন তিনি।
টরিদের তৃণমূলের মধ্যে সাবেক এই ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ব্রেক্সিটের শক্তিশালী সমর্থক তিনি এবং ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন তিনি।
তবে সাম্প্রতিক নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় রক্ষণশীল সহকর্মীদের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। কেউ কেউ তাকে পূর্ববর্তী সরকারের কার্যক্রমে ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের জ্যেষ্ঠ একজন মিত্র গত সপ্তাহে সুনাকের সাথে ঐক্যের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক জুনিয়র অংশীদার হতে চান না জানিয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সূত্র: এএফপি।
এসএস