নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। আর্থিক পরিকল্পনায় ইউ-টার্ন নিয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সংস্কারগুলোকে ‘অতি দ্রুত এগিয়ে’ নেওয়ার জন্য সোমবার (১৭ অক্টোবর) ক্ষমাপ্রার্থনা করেন তিনি।

দেড় মাসেরও কম সময় আগে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এবং এরই মধ্যে নিজের পদ সুরক্ষিত রাখতে বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাকে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে একের পর এক অপমানজনক আহ্বান সত্ত্বেও নেতৃত্বে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লিজ ট্রাস। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

সোমবার বিবিসিকে যুক্তরাজ্যের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দায় স্বীকার করতে চাই এবং যে ভুলগুলো হয়েছে তার জন্য দুঃখিত... (অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সংস্কার কাজে) আমরা অনেক দূর এবং খুব দ্রুত চলে গিয়েছিলাম।’

যাইহোক, যুক্তরাজ্যের সরকারি নীতির নিয়ন্ত্রণ এখন কার হাতে রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও লিজ ট্রাস বলছেন, ‘তিনি এই দেশের জন্য কাজ করতে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। তার সরকার সোমবার বাজারে নতুন করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে গত মাসে জারি করা ঋণ-জ্বালানির সঙ্গে যুক্ত প্রায় সকল ধরনের কর কমিয়েছে।

গত শুক্রবার নতুন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া জেরেমি হান্টের এই পদক্ষেপ ট্রাসের অবস্থানকে একটি অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ এমপি রজার গেল অবশ্য জেরেমি হান্টকে যুক্তরাজ্যের ‘ডি ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী’ বা প্রকৃত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগেই আখ্যায়িত করেন।

ব্রিটিশ রাজকোষের এই চ্যান্সেলর বলেন, কোনো সরকারই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার পদক্ষেপ জনসাধারণের অর্থের ওপর সুরক্ষা দেবে এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

সোমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজের ভুল করার জন্য ক্ষমা চান এবং টোরিদের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথাও জানান। তিনি বলেন, তার অল্প সময়ের এই প্রধানমন্ত্রীত্ব ‘নিখুঁত ছিল না’, তবে নিজের ভুল ‘শুধরে’ নিয়েছেন তিনি।

বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে লিজ ট্রাস বলেন, তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য এখনও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এটি অর্জন করতে এখন আরও বেশি সময় লাগবে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।

লিজ ট্রাস বিবিসি’র ক্রিস ম্যাসনকে বলেন, ‘(তার অধীনে) যে ভুলগুলো হয়েছে তার জন্য তিনি দুঃখিত’। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এখন তার ‘অগ্রাধিকার’।

ট্রাসের ভাষায়, ‘আমি মনে করি এটি একজন সৎ রাজনীতিকের চিহ্ন, যিনি বলেন- ‘হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি। আমি সেই ভুলটির সমাধান করেছি। এবং এখন আমাদের জনগণের জন্য কাজ করা দরকার’।

নিজের মতো করে জাতীয় স্বার্থে কাজ না করা আমার জন্য সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, প্রায় দেড় মাস আগে লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি খুবই অজনপ্রিয় বাজেট প্রণয়ন এবং কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এসব পদক্ষেপ তার দলকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। এতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টি বহু আসন হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

টিএম