রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ

ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের সাথে আলোচনার জন্য রাশিয়া উন্মুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

অবশ্য আলোচনার জন্য রাশিয়া উন্মুক্ত বলে ল্যাভরভের এই দাবিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে আখ্যা দিয়ে তা খারিজ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ মুখে আলোচনার কথা বললেও রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলা অব্যাহত রেখেছে বলে দাবি ওয়াশিংটনের। বুধবার (১২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার উপায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা তুরস্কের সাথে আলোচনায় সংশ্লিষ্ট হতে ইচ্ছুক রাশিয়া। যুদ্ধ প্রায় আট মাসে গড়িয়েছে এবং আলোচনার জন্য এখনও কোনো ভালো প্রস্তাব পায়নি মস্কো।

রয়টার্স বলছে, আলোচনার জন্য রাশিয়ার রাজি থাকার কথা সের্গেই ল্যাভরভ এমন সময়ে বললেন যখন সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ইউক্রেনে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার মুখে পড়েছে রুশ সামরিক বাহিনী। মূলত পাল্টা হামলার শিকার হওয়ার পর দখলকৃত বেশ কিছু ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনাদের পিছু হটা যুদ্ধের গতি ইউক্রেনের পক্ষে নিয়ে গেছে।

ল্যাভরভ বলেন, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবিসহ মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু রাশিয়া নাকি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, ‘এটি একটি মিথ্যা কথা। আমরা যোগাযোগ করার মতো ভালো কোনো প্রস্তাবই পাইনি।’

তবে আলোচনার জন্য রাশিয়া উন্মুক্ত বলে ল্যাভরভের এই বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে না যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ল্যাভরভের এই বক্তব্যে ওয়াশিংটনের ‘খুব কম আস্থা’ আছে। কারণ ল্যাভরভের এই মন্তব্য এমন সময়ে সামনে এসেছে যার কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং এতে বেসামরিক ইউক্রেনীয়রা প্রাণ হারিয়েছেন।

মঙ্গলবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের প্রাইস বলেন, ‘আমরা এটিকে বিভ্রান্তিকর হিসাবে দেখছি। আমরা এটিকে সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার জন্য গঠনমূলক, বৈধ প্রস্তাব হিসাবে দেখি না, যা এই নৃশংস যুদ্ধের অবসানের জন্য খুবই  প্রয়োজনীয়।’

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ শেষ করার জন্য আলোচনা শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যেই হতে হবে। প্রাইসের ভাষায়, ‘যদি রাশিয়ানরা বোঝাতে চায় যে, তারা সত্যিই সংলাপ এবং কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিরিয়াস... তাহলে সম্ভবত প্রথম পদক্ষেপ হবে, এই ধরনের নৃশংস হামলা বন্ধ করা। আর এটি ছাড়া এসব কথা কেবল খালি শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয়।’

এদিকে ল্যাভরভ বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ায় চলতি বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জি-২০ গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে বৈঠক হওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করবে না রাশিয়া। একইসঙ্গে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পেলে মস্কো তা বিবেচনা করবে বলেও জানান তিনি।

ল্যাভরভ বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি যে, আমরা কখনোই বৈঠক প্রত্যাখ্যান করি না। যদি কোনো প্রস্তাব আসে, তাহলে আমরা তা বিবেচনা করব।’

রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যে তুরস্ক আলোচনার আয়োজন করতে পারে এমন সম্ভাবনার বিষয়ে ল্যাভরভ বলেন, মস্কো যেকোনো পরামর্শ শুনতে ইচ্ছুক। তবে তার ফলাফল কি হবে সে বিষয়ে আগে থেকে কিছু বলা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান চলতি সপ্তাহে কাজাখস্তান সফর করার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে আলোচনার প্রস্তাব রাখার সুযোগ পাবেন।

এছাড়া গত মার্চের শেষে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনা ভেঙ্গে গেছে বলেও উল্লেখ করেছেন রুশ এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অন্যদিকে গত মাসে চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির ঘোষণা দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে যেকোনো ধরনের আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

টিএম