রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক আগামী বছরের জুনে
গত মাসে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সাথে সাথেই এবং কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই রাজা হয়েছিলেন চার্লস। রাজা তৃতীয় চার্লস নাম নিয়ে সিংহাসনেও বসেছেন ব্রিটেনের সাবেক এই প্রিন্স অব ওয়েলস।
কিন্তু রাজা চার্লসের এখনও রাজ্যাভিষেক হয়নি। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন মাসের ৩ তারিখ নতুন এই ব্রিটিশ রাজার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হতে পারে। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বুধবার (৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
বিজ্ঞাপন
মূলত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরপরই কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সিংহাসনের অধিকারী হয়েছেন চার্লস। কিন্তু একজন মুকুটধারী রাজা হতে বাস্তব এবং প্রথাগত কিছু পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হবে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছরের ৩ জুন লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজা তৃতীয় চার্লসকে মুকুট পরানো হতে পারে বলে যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অবশ্য এ বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণার আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে চাননি তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রিটেনের সরকারি এই কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রীষ্মের শুরুর কাছাকাছি সময়ে এই শনিবারকে ঘিরে এই পরিকল্পনাগুলো একত্রিত হচ্ছে। অবশ্য অন্যান্য দিনগুলোতেও এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা এখনও চলছে। তবে বাকিংহাম প্যালেস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
মূলত অভিষেক অনুষ্ঠান হলো রাজা হিসেবে চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী ধাপ। রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরবেন। তবে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়, তাই গত মাসে রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসলেও এই অভিষেক অনুষ্ঠান হয়নি।
রানি এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেছিলেন ১৯৫২ সালে, কিন্তু ১৯৫৩ সালের জুনের আগে তার অভিষেক হয়নি। গত নয়শো বছর ধরে অভিষেক অনুষ্ঠান হয় লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। উইলিয়াম দ্যা কনকোয়ারার ছিলেন প্রথম রাজা, যার অভিষেক হয়েছিল সেখানে। আর চার্লস হবেন ৪০তম রাজা।
মূলত মা দ্বিতীয় এলিজাবেথের মুকুট পরার প্রায় ৭০ বছর পর ২০২৩ সালের জুনে মাথায় মুকুট পরবেন রাজা তৃতীয় চার্লস। আর এর মাধ্যমেই নতুন এই ব্রিটিশ রাজার রাজত্বের সূচনা চিহ্নিত হবে।
ব্লুমবার্গ বলছে, আগামী বছরের জুনে রাজা তৃতীয় চার্লসের বয়স হবে ৭৪ বছর। এতে করে ব্রিটিশ ইতিহাসে মুকুট পরা সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত হবেন তিনি। তবে যে তথ্যটি ব্যাপকভাবে শোনা যাচ্ছে তা হলো- রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেকটি পূর্ববর্তী অনুষ্ঠানগুলোর চেয়ে ছোট, আরও বিনয়ী সংস্করণের হবে। মূলত আধুনিক ব্রিটেনের বৈচিত্র্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জন্য সেখানে স্থান থাকবে। সেদিন নিজের স্ত্রী কুইন কনসোর্ট ক্যামিলার সাথে মুকুট পরবেন চার্লস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ১৯৫৩ সালে যখন দ্বিতীয় এলিজাবেথের মাথায় মুকুট পরানো হয় তখন ১২৯টি দেশের ৮ হাজারেরও বেশি অতিথি লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ব্রিটিশ অভিজাতদের প্রত্যেক সদস্যসহ অতিথিদের বসার জন্য অস্থায়ী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছিল।
তবে নিরাপত্তা বিধিনিষেধ ও কড়াকড়ির কারণে আজকাল এই চার্চ প্রায় ২ হাজার মানুষ ধারণ করতে পারে। আর এটিই অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনাকারীদের জন্য মাথাব্যথা তৈরি করছে।
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, রাজ্যাভিষেক একটি অ্যাংলিকান ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা পরিচালনা করেন আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি। আনুষ্ঠানিকতার চূড়ান্ত পর্বে তিনি চার্লসের মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ড মুকুট স্থাপন করবেন। এটি খাঁটি স্বর্ণের তৈরি, যা ১৬৬১ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
টাওয়ার অব লন্ডনে যেসব মণিমাণিক্য রাখা আছে, এটি তার মধ্যমণি। একমাত্র রাজা বা রানির অভিষেকের সময় এটি তারা পরেন (এই কারণে নয় যে এটির ওজন ২.২৩ কিলোগ্রাম)। রাজকীয় বিয়ে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান না হলেও অভিষেক একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। সরকার এই অনুষ্ঠানের খরচ বহন করে এবং সরকারই এর অতিথি তালিকা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেয়।
এই অনুষ্ঠানে গানবাজনা হয়, হয় পাঠ এবং রীতি পালন। ব্যবহার করা হয় কমলা, গোলাপ, দারুচিনি, কস্তুরি এবং অম্বর। পুরো দুনিয়ার সামনে নতুন রাজা অভিষেক শপথ গ্রহণ করবেন। এসব আনুষ্ঠানিকতার সময় তিনি নতুন দায়িত্বের প্রতীক হিসেবে রাজদণ্ড গ্রহণ করবেন। আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি তার মাথায় খাঁটি সোনার মুকুট পরিয়ে দেবেন।
উল্লেখ্য, মায়ের মৃত্যুর পর গত সেপ্টেম্বরে ব্রিটেনের নতুন রাজা হন চার্লস। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, রানির মৃত্যুর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই রাজার পদবি পান সাবেক এই প্রিন্স অব ওয়েলস।
‘রাজা তৃতীয় চার্লস’ নামে পরিচিত নতুন এই ব্রিটিশ রাজা একই সঙ্গে ১৪টি কমনওয়েলথ দেশেরও রাজা।
টিএম