পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানকে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।

তিনি বলেছেন, চলতি বছরের প্রথমদিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর ‘বিপজ্জনকভাবে ভোটারদের মধ্যে মেরুকরণ’ করতে সমাজে বিষ ছড়াচ্ছেন ইমরান। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদপত্র গার্ডিয়ান এই তথ্য জানিয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে ৭০ বছর বয়সী শরিফ নির্দ্বিধায় বেশ কিছু কথা বলেছেন। ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তান শাসন করা সাবেক ক্রিকেট সুপারস্টার ইমরান খানের কারণে দেশের ভেতরে এবং বিদেশে পাকিস্তানের হওয়া ‘ক্ষতি’ নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই এবং পাকিস্তানের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য শেহবাজ শরিফ বিরোধী নেতা ইমরান খানকে ‘একজন মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক’ বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি ইমরানের নীতি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

এছাড়া ইমরান খান নিজের ব্যক্তিগত এজেন্ডা অনুসারে পাকিস্তানের বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। তার অভিযোগ, ব্যক্তিগত এজেন্ডা অনুসারে ইমরান এমনভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন যার ফলে তাকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ, আত্মকেন্দ্রিক, অহংকারী, অপরিণত রাজনীতিবিদ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে’। 

শরিফ দাবি করেন, ইমরান খান যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী তা ফাঁস হওয়া অডিওগুলো ‘একটি অকাট্য প্রমাণ’। আমি এটি আনন্দের সাথে বলছি না বরং বিব্রত এবং উদ্বেগের অনুভূতি নিয়ে বলছি। ব্যক্তিগত স্বার্থে বলা এসব মিথ্যাচারে কারণে আমার দেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সর্বদা সামরিক সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা শেহবাজ শরিফ স্বীকার করেছেন যে, ইমরান খান যখন রাজপথে আন্দোলন করছিলেন তখন তিনি পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। শরিফের সরকারের নেওয়া বেশ কিছু অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত যেমন- জ্বালানির কর বাড়ানো - খুবই অজনপ্রিয় প্রমাণিত হয়েছে।

শরিফ বলেন, ‘আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আগে কখনও চিন্তিত ছিলাম না। কিন্তু ইমরান খান এই সমাজে অসীম পরিমাণে বিষ ঢুকিয়েছেন এবং এটিকে এতটা মেরুকরণ করেছেন যে আগে কখনও হয়নি...তিনি তথ্য বিকৃত করছেন এবং ঘৃণা সৃষ্টি করছেন।’

উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে আসছেন ইমরান খান। এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে।

মূলত, আগামী বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে নির্বাচনী সমাবেশ করছেন ইমরান খান। তার এসব সমাবেশ ঘিরে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। তবে ইমরান খান বলছেন, তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পড়েছে সরকার।

পিটিআই প্রধান ইমরান খান দীর্ঘ সময় ধরে বারবারই বলে আসছেন যে, ‘শুধুমাত্র আগাম নির্বাচনই পাকিস্তানে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকটের অবসান ঘটাতে পারে’। ইমরানের দাবি, সময়মত নির্বাচন হলে দেশ আজ যে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে তা থেকে রক্ষা করত।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, পাকিস্তানের বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হলো দেশে নতুন সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করা।

টিএম