উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন (ফাইল ছবি)

সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এই অভিযানের সময় ইউক্রেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চার অঞ্চলকে - খেরসন, জাপোরিঝিয়া, দোনেতস্ক ও লুহানস্ক - রাশিয়ায় যুক্ত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এই ঘটনায় রাশিয়া আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়লেও সমর্থন পেয়েছেন উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের কিছু অংশকে রাশিয়ায় সংযুক্তির ঘোষণাকে সমর্থন করার কথা জানিয়ে মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রকে অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপের সময় ‘গ্যাংস্টারের মতো দ্বৈত ভূমিকা’ পালনের অভিযোগ করেছে।

উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) মস্কোর দাবিকে সমর্থন করে জানিয়েছে, ইউক্রেনের এই অঞ্চলগুলো রাশিয়ার অংশ হওয়ার বিষয়টি নিজেরাই (ভোটের মাধ্যমে) বেছে নিয়েছে।

ইউক্রেনের খেরসন, জাপোরিঝিয়া, দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে রাশিয়ায় যোগ দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে চারদিন ধরে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে বলে দাবি করা হয়। আর সেই ফলাফলের প্রেক্ষিতেই এই চার অঞ্চলকে রাশিয়ায় সংযুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানায় মস্কোর কর্মকর্তারা।

তবে কিয়েভ এবং পশ্চিমা নেতারা এই গণভোটকে ভুয়া হিসাবে অভিহিত করে নিন্দা করেছেন। এছাড়া জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে ইউক্রেনের কোনো পরিবর্তিত অবস্থাকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। একইসঙ্গে রাশিয়াকে এই অঞ্চলগুলো থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার অনুরোধও করেছে দেশটি।

এই পরিস্থিতিতে পিয়ংইয়ংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থার মহাপরিচালক জো চোল সু বলেছেন, ইউক্রেনের ওই গণভোট বৈধভাবে জাতিসংঘের সনদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্বতা ও আধিপত্য বজায় রাখার জন্য অন্যান্য দেশে আক্রমণ করার পরে ‘গ্যাংস্টারের মতো দ্বৈত ভূমিকা’ পালন করে।

কেসিএনএ’র প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জো চোল সু আরও বলেছেন, ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘একমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা’ বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অপব্যবহার করে সেসব দেশের আইনি অধিকারও লঙ্ঘন করে।’

তিনি বলেন, ‘সাবেক যুগোস্লাভিয়া, আফগানিস্তান এবং ইরাকসহ সার্বভৌম অনেক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসন যুদ্ধ শুরু করেছে। কিন্তু এরপরও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি।’

জো বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ যদি ওয়াশিংটনের ‘কঠোর কর্তৃত্বপূর্ণ এবং স্বেচ্ছাচারী আচরণসহ দ্বি-চারিতামূলক কাজকে’ অনুসরণ করে তাহলে সংস্থাটিকে পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

উল্লেখ্য, পিয়ংইয়ং ইউক্রেনের পূর্বে দু’টি স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইউক্রেন চলতি বছরের জুলাই মাসে রুশ মিত্র উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে দাবি করে, রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন রকেট এবং আর্টিলারি শেল কিনছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া সেটি প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পাশাপাশি ওয়াশিংটনকে ‘মুখ বন্ধ রাখতে’ এবং দেশের ভাবমূর্তিকে ‘কলঙ্কিত’ করার গুজব তৈরি করা বন্ধ করতেও সতর্ক করে দেয়।

টিএম