জেলেনস্কির কণ্ঠে পুতিনের পরমাণু হামলার শঙ্কা
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেন বলে ‘বিশ্বাস না করার কথা’ গত সপ্তাহেই জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে তার সেই বিশ্বাস উবে যেতে সময় লাগেনি।
সম্মুখভাগে থেকে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলা করা ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্টের কণ্ঠে এখন পুতিনের পরমাণু হামলার শঙ্কা। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন জেলেনস্কি। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার সিবিএস নিউজকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন- রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। পুতিন এর আগে রাশিয়ার ভূখণ্ড রক্ষার জন্য ‘হাতে থাকা সকল উপায়’ মস্কো ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছিলেন।
সিবিএস নিউজের হোস্ট মার্গারেট ব্রেনানকে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘দেখুন, সম্ভবত গতকাল এটি (পরমাণু হামলার হুমকি) কেবল একটি ব্লাফ (কথার কথা বা ধোঁকা) ছিল। কিন্তু এখন, এটি একটি বাস্তবতাও হতে পারে।’
গত বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্ভাব্য সকল অস্ত্র ব্যবহার করে নিজের ভূখণ্ড রক্ষার কথা জানিয়ে তিনি সতর্ক করেন যে, তিনি কেবল ‘কথার কথা’ বলছেন না। সেসময় তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ‘বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক অস্ত্র’ দিয়ে নিজের ভূখণ্ড রক্ষা করার কথা বিবেচনা করবে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে পূর্ব ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে এখন ভোট চলছে। বলপ্রয়োগ করে দখল করা এসব অঞ্চলে রোববার তৃতীয় দিনের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোট শেষ হওয়ার পর রাশিয়ান পার্লামেন্ট কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো এই সংযোজনকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে।
আলজাজিরা বলছে, পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেতস্ক, খেরসন এবং জাপোরিজিয়া- এই চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার পর সেখানে কোনো হামলা হলে সেটা রাশিয়ার ওপর আক্রমণ হিসাবে দেখাতে পারে মস্কো। আর এখানেই পুতিনের বক্তব্য কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা।
অবশ্য পশ্চিমা নেতারাও পুতিনের বক্তব্যকে বেশ গুরুত্ব সহকারেই নিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল গত শনিবার বলেছেন, ‘যখন কেউ বলে যে, এটি (হামলার হুমকি) কোনো ধোঁকা নয়, তখন আপনাকে তাদের কথা গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।’
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান রোববার সিবিএসকে বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্রের যেকোনো ব্যবহার রাশিয়ার জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে’ বলে মস্কোকে জানিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
এই পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি ব্রেনানকে আরও বলেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রাশিয়ান দখলদারিত্বকে ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ বলে মনে করে ইউক্রেন। যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই পারমাণবিক স্থাপনায় বারবার হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং এসব হামলার জন্য উভয়পক্ষই একে-অপরকে দায়ী করেছে।
জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের হুমকি তৈরি করার জন্যই ইউক্রেনের বাহিনী গত সপ্তাহে আবারও পারমাণবিক এই প্লান্টে বোমা বর্ষণ করেছে।’
সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দীর্ঘ এই যুদ্ধের মাধ্যমে ইউক্রেনে দখল করা ভূখণ্ডগুলো হাতছাড়া হতেই গত সপ্তাহে সামরিক গতিবিধি বাড়ানের নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দেশটিতে নতুন যে সামরিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাতে জানানো হয়েছিল, যাদের সামরিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরও যুদ্ধে ডাকা হবে। অর্থাৎ ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য আরও ৩ লাখ রিজার্ভ সেনা জড়ো করতে পারবে রাশিয়া।
এসব কিছুর পরও জেলেনস্কি জোর দিয়ে দাবি করছেন, পুতিন ‘জানেন যে তিনি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সিবিএসকে বলেছেন, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তার সরকারের আরও বিলিয়ন ডলার, আরও অস্ত্র এবং রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন।
পুতিনকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের তার ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে এবং তাকে এসব চালাতে দেওয়া যাবে না।’
টিএম