ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য বৃদ্ধ-অসুস্থদের তলব, ভুল স্বীকার রাশিয়ার
সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দীর্ঘ এই যুদ্ধের মাধ্যমে ইউক্রেনে দখল করা ভূখণ্ডগুলো হাতছাড়া হতেই সামরিক গতিবিধি বাড়ানের নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দেশটিতে নতুন যে সামরিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাতে জানানো হয়েছিল, যাদের সামরিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরও যুদ্ধে ডাকা হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী, বহু নাগরিককেই যুদ্ধে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যাদের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। কেউ আবার গুরুতর অসুস্থও।
বিজ্ঞাপন
তবে এ নিয়ে জনরোষের পর নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে মস্কো। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য রিজার্ভ সৈন্যদের তলবে হওয়া ভুলগুলো রোববার সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ। মূলত যুদ্ধের জন্য ছাত্র, বয়স্ক বা অসুস্থ ব্যক্তিদের তলব করায় রুশ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয় এবং এরপরই এটিকে ভুল হিসেবে দাবি করে সেটি সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
গত বুধবার যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আংশিক সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দেন, তখন তিনি বলেছিলেন, শুধুমাত্র ‘প্রাসঙ্গিক’ দক্ষতা বা সামরিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই এই ক্যাটাগরিতে থাকবেন। অর্থাৎ যাদের সামরিক অভিজ্ঞতা রয়েছে বা যারা সামরিক কার্যকলাপে দক্ষ, তাদের প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্রে ডেকে নেওয়া হবে। প্রেসিডেন্টের এই নির্দেশের পরই রুশ নাগরিকদের মধ্যে দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়।
এদিকে, বাড়ি বাড়ি যুদ্ধের তলবের চিঠি আসতেই নতুন করে শুরু হয় বিক্ষোভ। দেখা যায়, যুদ্ধে ডাকা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের, যাদের বর্তমান বয়স ৬০ বছর পার হয়ে গেছে। এমনকি গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের অনেককেই রীতিমতো জোর করে ট্রেনিং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার অনেক শিক্ষার্থীকেও যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বলা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে ৬৩ বছর বয়সী সাবেক এক সামরিক কর্মীকে নিয়ে যাওয়া হয় ট্রেনিং ক্যাম্পে। তিনি সেখানে বারবার নিজের স্বাস্থ্যের কথা জানালেও, কথা শোনেনি প্রশাসন। পরে শুক্রবার রাতে তিনি অসুস্থ অবস্থায় ক্যাম্প থেকে ফিরে আসেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা আরআইএ নভোস্তি।
এছাড়া ওই অঞ্চলেরই ৫৮ বছর বয়সী এক স্কুল পরিচালককেও তলব করা হয়েছে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। কোনো সামরিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কেন ডাকা হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে তার মেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও। এরপরই প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যাবতীয় নথি যাচাই করে তাকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেন বলে জানিয়েছে আরআইএ।
এএফপি বলছে, এই ধরনের ভুল এড়াতে রোববার রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের স্পিকার ভ্যালেন্টিনা মাতভিয়েনকো সকল রুশ গভর্নরদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘রিজার্ভ সৈন্য তলবের ক্ষেত্রে ত্রুটি... সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে এবং এটিই স্বাভাবিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ ধরে নিচ্ছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ মিশনটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার চেয়ে দ্রুত তাদের রিপোর্ট (তাদের ঊর্ধ্বতনদের কাছে) হস্তান্তর করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটি অগ্রহণযোগ্য... আংশিক সৈন্য সমাবেশ সঠিক মানদণ্ডের সাথে পরিচালিত হচ্ছে, এটি নিশ্চিত করুন। এবং কোনো ভুল ছাড়াই!’
রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার ড্রোজডেঙ্কো স্থানীয় জেলা প্রধানদের বলেছেন, ‘বাসিন্দাদের যেকোনো আবেদন ব্যক্তিগত ভাবে যাচাই-বাছাই এবং প্রতিটি ঘটনা আলাদাভাবে যাচাই করতে হবে।’
ভ্লাদিমির অঞ্চলের গভর্নর ভ্লাদিমির আভদেভ গত শনিবার বলেছেন, ইতোমধ্যে কাউকে ভুল করে তলব করা হলে বা ট্রেনিং ক্যাম্পে জড়ো করা হলে, তারা বাড়ি ফিরে যাবেন।’
টিএম