ফেসিয়াল রিকগনিশন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের শনাক্ত করবে ইরান
ইরানে নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে হাজার হাজার নারী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। হিজাব বিতর্কে দেশটিতে চলছে তোলপাড়। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না আন্দোলন। আর তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলন দমাতে চাইছে ইব্রাহিম রাইসির সরকার।
হিজাববিরোধী আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরানের পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
ইরান প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে শত শত নারীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তারপরও আন্দোলন থামছে না। তারা মনে করছে, আন্দোলনের পেছনে হিজাব নিয়ে উসকানি রয়েছে। সেটা বন্ধ করতেই আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছে ইরানি পুলিশ। সেজন্যই এবার প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভ: ৮ দিনে নিহত অর্ধশতাধিক
দেশটিতে নারীদের হিজাব পরা ও লম্বা চুল রাখার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই আইন কোনোভাবেই বাতিল করছে না ইব্রাহিম রাইসির সরকার। বিশেষজ্ঞদের দাবি, হিজাব নিয়ে চলা আন্দোলন দ্রুত বন্ধ করতে চাইছে তেহরান।
এদিকে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ প্রযুক্তি ব্যবহারের খবর সামনে আসায় ক্ষোভে ফুঁসছেন ইরানি নারীরা। তাদের অভিযোগ, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
এক আন্দোলনকারী নারী বলেন, এরপর তো হিজাব না পরে রাস্তায় বের হলে আমাকে চিহ্নিত করে রাখবে সরকার। সেক্ষেত্রে আমার এবং আমার পরিবারের ওপরও অত্যাচার নেমে আসতে পারে।
হিজাব নিয়ে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে গত শুক্রবার মৃত্যু হয় উত্তর-পশ্চিম ইরানের বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনির। তার মৃত্যুর পরই ইরানজুড়ে হিজাব নিয়ে শুরু হয়েছে আন্দোলন। বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরার আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদীরা তেহরানের রাস্তায় জড়ো হন। সেখানে তাদের চিৎকার করে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ‘হিজাব নয়, স্বাধীনতা ও সাম্য চাই’– বলে স্লোগান দেন তারা। পাশাপাশি অনেক ইরানি নারী তাদের চুল কেটে ফেলেও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এ অবস্থায় বুধবার প্রতিবাদীদের ওপর গুলি চালায় ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী। তাতে এক কিশোর-সহ মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের।
সম্প্রতি হিজাব না পরে রাস্তায় বের হয়েছিলেন মাশা আমিনি। তাকে প্রকাশ্যে হেনস্তা করেন কয়েকজন। পরে ওই তরুণীকে আটক করে ইরানের পুলিশ। মাশার পরিবারের অভিযোগ, হেফাজতে থাকাকালে তার ওপর অত্যাচার চালানো হয়। ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওই তরুণী কোমায় চলে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় তার। এরপরই মাশার পরিবারের পক্ষ থেকে নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। মাশাকে আটক করার পর পুলিশ সদস্যরা তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিলেন বলেও দাবি করেছিলেন তারা।
এসএসএইচ