ছবি : সিএনএন

উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে এ পর্যন্ত কোনো অস্ত্র কেনেনি রাশিয়া; এবং নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রির কোনো পরিকল্পনাও উত্তর কোরিয়ার নেই।  

দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা কেসিএনএকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুধবার কেসিএনএকে তিনি বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত রাশিয়ায় কোনো অস্ত্র-গোলাবারুদ রপ্তানি করিনি এবং আপাতত সেখানে অস্ত্র রপ্তানির কোনো পরিকল্পনাও আমাদের নেই।’

চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযানকে সচল রাখতে রাশিয়ার উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে বলে তাদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।  নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্সসহ পশ্চিমা একাধিক সংবাদমাধ্য এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে।

পশ্চিমা এসব সংবাদমাধ্যমকে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে লাখো রকেট ও কামানের গোলা ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে বুধবার সেই গুজব খারিজ করে দিয়ে উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ‘নিষ্ঠুর শক্তি’ সচেতনভাবেই  এসব গুজব রটাচ্ছে।

এদিকে বুধবার কেসিএনএর এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রও তার পূর্বকার বক্তব্য ঘুরিয়ে ফেলেছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা তথ্য মিথ্যে নয়। তবে আমরা জানতে পেরেছি— ক্রয়বিক্রয়ের প্রক্রিয়াটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি এবং উত্তর কোরিয়া থেকে কেনা অস্ত্র ইউক্রেনে ব্যবহার না ও করা হতে পারে।’

আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইউরেনিয়াম সংগ্রহ, পরমাণু অস্ত্র প্রকল্প চালানো এবং একের পর এক সমরাস্ত্র নির্মাণ ও পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের জেরে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে উত্তর কোরিয়া। যদি সত্যিই রাশিয়া দেশটির কাছ থেকে অস্ত্র কেনে, সেক্ষেত্রে সেটি হতো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘণ।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার ‍দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই প্রদেশ দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।

চলতি সেপ্টেম্বর সপ্তম মাসে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। এই চার মাস সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্ক, ইউক্রেনের দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে।

তবে গত কয়েক মাসে ইউক্রেইনে হু হু করে ঢোকা পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্রের সহায়তায় ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে জানিয়েছে বিভিন্ন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম।

উত্তর কোরিয়ার অধিকাংশ রুশ-নকশার অস্ত্রশস্ত্র সোভিয়েত যুগের; তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের বেশ মিলও আছে।

অল্পকটি দেশ ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অঞ্চলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তার মধ্যে উত্তর কোরিয়াও আছে। জুলাইয়ে তারা দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিককে আলাদা স্বাধীন দেশ বলে স্বীকার করে নেয়।

এর পাল্টায় ইউক্রেইন পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনকে লেখা এক চিঠিতে দুই দেশের ‘ব্যাপক ও গঠনমূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে’ আরও বিসৃত করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

সূত্র : বিবিসি

এসএমডব্লিউ