এবার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ পাক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে
আগামী নভেম্বরের পর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে কোন সেনা কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে— তা নিয়ে বড় ভাই নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলোচনা করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে ভারতের বৃহত্তম বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঞ্জাব প্রাদেশিক আইনসভার পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কিত মন্ত্রী বাশারাত রাজা আইনসভার সোমবারের অধিবেশনে একটি রেজুল্যুশন উত্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, ‘পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে কোন সেনা কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে— প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তার বড়ভাই নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সে সম্পর্কে আলোচনা ও শলা-পরামর্শ করেছেন। দুই দিন আগে লন্ডনে নওয়াজ-শেহবাজের এই আলোচনা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
বিজ্ঞাপন
‘পাকিস্তানের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ও আদালতের দণ্ডপ্রাপ্ত। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি জাতীয় রাজনীতি থেকে নির্বাসিত এবং আদালতের দণ্ড এড়াতে বর্তমানে বিদেশে পলাতকের জীবনযাপন করছেন।’
রেজুল্যুশনে আরও বলা হয়, ‘সেনাবাহিনী ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয় পাকিস্তানের প্রেক্ষাপট ও জাতীয় রাজনীতিকে অত্যন্ত স্পর্ষকাতর বিষয়। সেখানে এই বাহিনীর শীর্ষপদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সে সম্পর্কে একজন পলাতক অপরাধীর সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কেবল সংবিধানের ৬ নম্বর ধারা (আর্টিক্যাল ৬) লঙ্ঘণই করেননি, বরং একজন পলাতক অপরাধীর পরামর্শ করার মাধ্যমে তিনি দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীরও অপমান করেছেন।’
‘পাঞ্জাব প্রাদেশিক পার্লামেন্ট থেকে (পাকিস্তানের) প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ উত্থাপন করা হলো।’
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রাদেশিক আইনসভায় ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআই ও মিত্র দল পিএমএলকিউয়ের সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে মন্ত্রী এই রেজুল্যুশন উত্থাপন করার পর স্বাভাবিকভাবেই আইনসভার অধিকাংশ সদস্য এটির পক্ষে ভোট দেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে কয়েক দিন আগে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই বড় ভাই নওয়াজ শরিফের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন বলে জানা গেছে।
পাকিস্তানের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, দুই ভাইয়ের আলোচনার মধ্যে সেনাপ্রধান নিয়োগের প্রসঙ্গটিও ছিল এবং এ সম্পর্কে শেহবাজ শরিফ বড় ভাইয়ের পরামর্শ চেয়েছেন। যুক্তরাজ্য থেকে এখনও দেশে ফেরেননি শেহবাজ।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আল-আজিজিয়া দুর্নীতি মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০১৯ সালে আদালতের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান নওয়াজ, তারপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।
পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার আহমেদ বাজওয়া আগামী নভেম্বর অবসরে যাচ্ছেন। তারপর এই পদে বাজওয়ার উত্তরসূরী কে হবেন, সে সম্পর্কিত আলোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে দেশটির রাজনৈতিক মহলে।
নওয়াজ-শেহবাজের রাজনৈতিক দল পিএমএলএন ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের অন্যান্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই সেই আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিটিআইয়ের, যেটির চেয়ারম্যান ইমরান খান গত ১০ এপ্রিল পার্লামেন্টে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন।
এদিকে, লন্ডনে শেহবাজ-নওয়াজের আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মঙ্গলবার এক বার্তায় পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেন, ‘পরবর্তী সেনা প্রধান কে হবেন— তা নিয়ে আলোচনা করছে জাতীয় চোররা। দেশের জন্য এর চেয়ে অসম্মানজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে!’
এসএমডব্লিউ