মাতৃভূমিকে রক্ষায় সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ পুতিনের
‘মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য’ সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দেওয়া এক ভাষণে এই নির্দেশ দেন তিনি। এতে করে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য আরও সেনা মোতায়েন করতে পারবে রাশিয়া।
পুতিন এমন এক সময়ে এই ঘোষণা দিলেন যখন ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে রাশিয়ান বাহিনী। একইসঙ্গে পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে চালানো পাল্টা এসব হামলার মাধ্যমে রাশিয়ার কিছু দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেন। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার ২০ লাখ জনবল সম্পন্ন সামরিক রিজার্ভের আংশিক সমাবেশের ঘোষণা দেন। রাশিয়া এবং নিজের অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করার জন্য এই ঘোষণা দেন তিনি।
এসময় পুতিন দাবি করেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চায় এবং ইউক্রেনে শান্তি চায় না। ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য, এর সার্বভৌমত্ব (...), আমি আংশিক সৈন্য সমাবেশের বিষয়ে রুশ সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’
এই নির্দেশনার ফলে যারা কোন একসময় রুশ সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন বা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর জন্য সেই সব সংরক্ষিত সৈন্যদের এখন যুদ্ধ করার জন্য ডেকে পাঠানো হবে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার মাতৃভূমি, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা আর জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করার তিনি সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ (বুধবার) থেকেই সৈন্য সমাবেশ শুরু হয়ে যাবে।
পুতিন পুনর্ব্যক্ত করেন যে, তার লক্ষ্য পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলকে ‘মুক্ত করা’ এবং এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ইউক্রেনের ‘দাস’ হিসাবে আর ফিরে যেতে চায় না।
পুতিন আরও বলেন, পশ্চিমারা পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলে জড়িত এবং রাশিয়ার কাছে সেসব কর্মকাণ্ডের ‘প্রত্যুত্তর দেওয়ার মতো প্রচুর অস্ত্র’ রয়েছে। এমনকি তিনি ভয় দেখানোর এসব বলছেন না বলেও জানিয়ে দেন পুতিন।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, যারা সামরিক বাহিনীতে এর আগে কাজ করেছেন, সেই সংরক্ষিত বাহিনীর সৈনিকদের সেনাবাহিনীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার অনেক যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্যও তিনি বাড়তি তহবিল বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন।
এমনকি ডনবাসে যারা লড়াই করছে, তাদের আইনি স্বীকৃতি দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন।
রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক এবং দোনেতস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করে। ২০১৪ সালে মস্কো আংশিকভাবে এই অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে নেয়। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ান বাহিনীর হাতে থাকা ইউক্রেনের সকল অংশকেই অবৈধভাবে দখল করা বলে মনে করে।
রয়টার্স বলছে, রাশিয়া এখন দোনেতস্কের প্রায় ৬০ শতাংশ দখল করেছে এবং কয়েক মাস তীব্র লড়াই চলাকালীন ধীরগতির অগ্রগতির পরে জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় পুরো লুহানস্ক দখল করে নিয়েছে।
এদিকে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন- পশ্চিমা দেশগুলো সীমা অতিক্রম করেছে। পশ্চিমারা রাশিয়াকে দুর্বল, বিভক্ত ও ধ্বংস করার আহ্বান জানাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। এলপিআর (লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক) সম্পূর্ণ মুক্ত, ডিপিআর (দোনেতস্ক পিপলস রিপাবলিক) আংশিকভাবে মুক্ত করা হয়েছে।
টিএম