রাশিয়ায় যোগ দিতে দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে তড়িঘড়ি ভোট
মস্কোর নিয়ন্ত্রণাধীন ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ায় যোগদানের জন্য জরুরিভিত্তিতে তথাকথিত ভোটের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ভোট অনুষ্ঠিত হলে এসব ভূখণ্ডের রাশিয়ায় সংযুক্তির পথ প্রশস্ত করবে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অনেকটা থমকে গেছে এবং ইউক্রেন পাল্টা হামলা চালিয়ে নিজেদের উত্তর-পূর্বের কিছু অংশ রাশিয়ার দখল থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণে মস্কোর নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলোর রাশিয়ান সমর্থিত কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এই সপ্তাহে রাশিয়ায় যোগদানের বিষয়ে ভোট চান। এর আগে রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে অধিভুক্ত করেছিল। এতে করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়ে মস্কো।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল তবে ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো পরে ইঙ্গিত দেয় যে, পুতিনের ভাষণ স্থগিত করা হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আকস্মিকভাবে ভাষণ স্থগিত করা হয়।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা মঙ্গলবার বলেছেন, সম্ভাব্য ‘ভুয়া এই গণভোট কিছুই পরিবর্তন করবে না’।
বিবিসি বলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনোই ক্রিমিয়া অধিগ্রহণকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এটি দীর্ঘদিন ধরেই স্পষ্ট যে, রাশিয়া একইভাবে (ইউক্রেনের) অন্যান্য দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে একই পন্থায় আয়ত্তে নিতে চায়। এছাড়া আরও ইউক্রেনের ভূখণ্ড সংযুক্ত করার ফলে ক্রেমলিন এই দাবি করতে পারবে যে, রাশিয়া নিজেই ন্যাটো অস্ত্রের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেন দ্রুতগতিতে রাশিয়ার কাছ থেকে নিজেদের এলাকা পুনর্দখল করছে। আর এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রুশ নিয়ন্ত্রিত লুহানস্ক ও দোনেতস্ক অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা মঙ্গলবার বলেন, ওই এলাকাগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা করতে তারা এই সপ্তাহের শেষের দিকে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন।
শুক্রবার আরম্ভ হতে যাওয়া এই গণভোটের ঘোষণা দেওয়ার আগে সাবেক রুশ নেতা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, লুহানস্ক ও দোনেতস্ককে সরাসরি রাশিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হলে নতুন ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তটি ‘অপরিবর্তনীয়’ হয়ে যাবে এবং সেটি রাশিয়াকে ওই এলাকার প্রতিরক্ষায় ‘যে কোন পন্থা অবলম্বনের’ অধিকার দিবে।
বহুসংখ্যক রুশ ভাষাভাষী মানুষ অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে গণভোট হলে সেটি খুব সম্ভবত রাশিয়ার পক্ষেই যাবে। তবে ওই এলাকাকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে দেওয়া যেকোন ঘোষণাকেই ইউক্রেন বা যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা কেউই স্বীকার করবে না। মূলত রাশিয়ার সাত মাস ধরে চলতে থাকা আক্রমণ প্রতিহত করতে ইউক্রেনের সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
রাশিয়া যদি লুহানস্ক ও দোনেতস্ক অঞ্চলকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে, তাহলে ইউক্রেনের বাহিনী সেগুলোকে পুনর্দখলের চেষ্টা করলে, তা আরও তীব্র মাত্রার লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে।
দোনেতস্ক অঞ্চলের প্রধান ডেনিস পুশিলিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পীড়িত ডনবাসের মানুষ যে মহান দেশকে নিজেদের মাতৃভূমি হিসেবে সর্বদাই বিবেচনা করেছে, সেই দেশের অংশ হওয়ার অধিকার তারা অর্জন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাখ লাখ রুশ যেটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেই ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার পুনঃস্থাপনে’ এই ভোটটি সহায়তা করবে।
বিবিসি বলছে, দোনেতস্ক এবং লুহানস্কের দুই রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আগামী ২৩-২৭ সেপ্টেম্বর ভোট আয়োজন করবে। রাশিয়ান সৈন্যরা উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ থেকে ইউক্রেন আক্রমণ করার তিন দিন আগে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন এই দুই অঞ্চলকেই স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
খেরসনের দক্ষিণ অঞ্চলে রাশিয়ান-নিযিুক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, তারাও একটি ভোট আয়োজন করবেন এবং একই রকম ঘোষণা জাপোরিঝিয়ায় রাশিয়ান-অধিকৃত এলাকা থেকেও এসেছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলেছে, এসব অঞ্চলের লোকেরা ব্যক্তিগতভাবে বা দূরে থেকেও ভোট দিতে পারবে।
কয়েক মাস ধরে রাশিয়ান-নিযুক্ত কর্তৃপক্ষ নিজস্ব কৌশলে দখলকৃত ভূখণ্ডগুলোতে গণভোট আয়োজনের চেষ্টা করেছে। একটি অবাধ বা সুষ্ঠু ভোটের কোনো আশা না থাকলেও অব্যাহত যুদ্ধ এমনকি তাদের নিয়ন্ত্রণে না থাকা অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করাও দিনে দিনে অবাস্তব করে তুলেছে।
মূলত ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ রাশিয়ার এই ভাবনাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। গত জুলাই থেকে লুহানস্কের বেশিরভাগ অংশ রাশিয়ার হাতে থাকলেও সোমবার লুহানস্কে ইউক্রেনের নেতা ঘোষণা করেন যে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বিলোহোরিভকা গ্রামটি পুনরুদ্ধার করেছে।
এছাড়া দোনেতস্কের বেশিরভাগ অংশ এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং রাশিয়া আজভ সাগর বরাবর উপকূলীয় এলাকা দখল করেছে।
টিএম