টানা সাড়ে ছয় মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনে ইউক্রেন শুরুতে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দেশটি এখন পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। এতে করে সফলতার দেখাও পাচ্ছে দেশটি।

ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি পরিত্যাগ করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি চলমান যুদ্ধের প্রধান ফ্রন্ট লাইনগুলোর একটি। রোববার (১১ সেপেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ামে রুশ বাহিনীর আকস্মিক পতন হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভিযান শুরুর পর মার্চ মাসে রাজধানী কিয়েভ থেকে নিজেদের সৈন্যদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল রাশিয়া। এরপর থেকে শনিবার ইজিয়ামে রুশ বাহিনীর দ্রুত পতনই মস্কোর সবচেয়ে খারাপ পরাজয়।

চলমান সামরিক অভিযানে ইজিয়ামকে লজিস্টিক বেস হিসাবে ব্যবহার করছিল রাশিয়ান বাহিনী। এখান থেকেই রুশ সেনারা দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল।

রাষ্ট্র-চালিত রুশ বার্তাসংস্থা তাস রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, তারা সৈন্যদের আশপাশের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার এবং প্রতিবেশী দোনেতস্কের অন্য কোথাও অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে।

খারকিভের রুশ প্রশাসনের প্রধান বাসিন্দাদের প্রদেশটি থেকে সরিয়ে নিতে এবং ‘জীবন বাঁচাতে’ রাশিয়ায় পালিয়ে যেতে বলেছেন বলেও তাস জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা রাশিয়ান-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে গাড়ির ট্র্যাফিক জ্যামের বর্ণনা দিয়েছেন।

এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের পাল্টা আক্রমণে ইউক্রেন নতুন জয়ের দাবি করেছে। একইসাথে, পূর্ব-খারকিভ অঞ্চলে রুশ নিযুক্ত প্রশাসক স্বীকার করেছেন, ইউক্রেন ‘উল্লেখযোগ্য জয়’ অর্জন করেছে।

এছাড়া ইউক্রেনের নেতারা রাশিয়ান সেনাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি ঘোষণাও করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার সন্ধ্যায় এক ভিডিও ভাষণে বলেছেন, ‘রাশিয়ান সেনাবাহিনী আজকাল তার সর্বোত্তম ক্ষমতা প্রদর্শন করছে - তার পিঠ দেখানোর (পালিয়ে যাওয়ার) জন্য।’

তিনি বলেন, এই মাসের শুরুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী প্রায় ২ হাজার বর্গ কিলোমিটার (৭৭০ বর্গ মাইল) এলাকা মুক্ত করেছে।

এর আগে গত শুক্রবার রাতে ভিডিও বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের বাহিনী খারকিভ অঞ্চলে ৩০টির বেশি জনবসতি পুনর্দখল করেছে।

একইদিন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন খারকিভে রাশিয়ার নিযুক্ত প্রশাসক ভিটালি হানশেভ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ গুরুতর। বাস্তবতা হচ্ছে, ইতোমধ্যেই ওখানে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ফাটল দেখা গেছে, যা ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বিজয়।’

আল জাজিরার গ্যাব্রিয়েল এলিজোন্ডো কিয়েভ থেকে জানিয়েছেন, ইজিয়াম ‘অনেক মাস ধরে রাশিয়ানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তিস্থল’।

তিনি বলছেন, ‘এই শহরটি দখল করতে রাশিয়ানদের ছয় সপ্তাহ ধরে লড়াই করতে হয়েছিল এবং এখন দেখা যাচ্ছে যে ইউক্রেনীয়রা এটি পুনরুদ্ধার করে ফেলেছে এবং সেটিও প্রায় ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মতো সময়সীমার মধ্যে।’

টিএম