পয়োঃবর্জ্য-দুর্গন্ধ-সাপের উৎপাতে অতিষ্ঠ পাকিস্তানের বানভাসিরা
পাকিস্তানে গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বর্ষণ ও তার প্রভাবে পাহাড়ি হিমবাহ গলে সৃষ্ট নজিরবিহীন বন্যায় ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরবাড়ি-ক্ষেতের ফসল ও সহায়সম্বল হারানো লাখ লাখ বানভাসি।
দেশটিতে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র কম থাকায় এই বানভাসিরা আশ্রয় নিয়েছেন রেলস্টেশন, বাসস্টেশনসহ এখনও বন্যার পানিতে ডোবেনি— এমন সব উঁচু জায়গায়।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গ্রামীণ এলাকার ছোট একটি রেলওয়ে স্টেশন। গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সেই স্টেশন ও তার আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদেরই একজন জেবুন্নিসা বিবি। বন্যার পানি তার বাড়িঘর গ্রাস করে নেওয়া দু’সপ্তাহ আগে স্বামী-সন্তান নিয়ে এই স্টেশনে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
এএফপিকে জেবুন্নিসা বিবি বলেন, ‘এখানে কোনো শৌচাগার কিংবা গোসলের স্থান নেই। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদেরকে খোলা জায়গায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হচ্ছে।’
‘একে তো দুর্গন্ধে এখানে টেকা দায়, তারওপর খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কর্ম সারতে গিয়ে চরম লজ্জা ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। আমি নিজেই এর শিকার হয়েছি কয়েকদিন আগে।’
এএফপিকে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে একটি গাছের তলায় যখন প্রাকৃতিক কর্ম সারছিলেন তিনি, সেসময় তিনি খেয়াল করেন— একজন পুরুষ আড়াল থেকে তাকে দেখছে।
‘ওই ঘটনার পর থেকে আমার মেয়েদের নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। তাদেরকে একা পাঠিয়ে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারি না। সবসময় ভয় হয়, নিশ্চয়ই আড়াল থেকে কোনো পুরুষ তাদের দিকে নজর রাখছে।’
‘আমরা সবসময় পর্দার আড়ালে থাকতে অভ্যস্ত, কিন্তু এই দুর্যোগের এবার খোদা আমাদের পর্দা সরিয়ে দিয়েছেন।’
স্টেশনটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, পয়ো:বর্জ্য, বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া গাছপালা ও শস্য পচার গন্ধ, বাসি-পচা খাবারের গন্ধে রীতিমতো ভারী হয়ে আছে সেখানকার বাতাস। সেই সঙ্গে স্টেশনের সর্বত্র সারাক্ষণ ভন ভন করছে মশা-মাছি। এক কথায় সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার সব ধরনের শর্তের উপস্থিতি রয়েছে সেই স্টেশনটিতে।
স্টেশনটিতে আশ্রয় নেওয়ার পর কয়েকজন নারী বন্যার পানিতে গোসল করা শুরু করেছিলেন, কিন্তু তার ফলে চর্মরোগ হওয়ায় এখন তা বন্ধ রয়েছে।
শামিন নামে এক নারী জানান, শৌচাগারে যেন ঘন ঘন যেতে না হয়— সেজন্য যতখানি সম্ভব কম পানি পান করছেন তিনি ও তার মেয়েরা। এতে সারাক্ষণই পিপাসার কষ্ট সহ্য করতে হয় তাদের।
তিনি আরও জানান, সাধারণত দিনের আলো নেভার পর সন্ধ্যা ও রাতের অন্ধকারে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে যান তারা, এবং সারক্ষণ খেয়াল রাখেন— কোনো পুরুষ তাদের অনুসরণ করছে কি না।
‘কিন্তু এখানে রাতের বেলায় বাইরে যাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ রাত হলেই স্টেশনের বাইরের অন্ধকার এলাকায় এখানে সাপ আর কাঁকড়াবিছের আনাগোনা বেড়ে যায়’, এএফপিকে বলেন শামিন।
এসএমডব্লিউ