প্রশ্ন ভারতীয় গণমাধ্যমের
স্ত্রীর কারণে হারলেন ঋষি সুনাক?
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসেবে বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে লিজ ট্রাসের কাছে হেরে গেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। এর মধ্য দিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রাসকে পেলেন ব্রিটেনের নাগরিকরা। প্রথম থেকে লড়াইয়ে ছিলেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তাকে হারিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি বাকি দাপুটে প্রার্থীদের হারিয়ে দেবেন, এমন আশা সম্ভবত তার অনেক সমর্থকও করেননি। তবে ঋষির হেরে যাওয়ার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার কিছুটা দায় স্ত্রী অক্ষতা মূর্তিকে দিয়েছে। দৈনিকটি তাকে কাঠগড়ায় তুলে লিখেছে, ঋষিকে নিয়ে ব্রিটেন জুড়ে হইচই পড়লেও তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তিও কিছু কম যান না। বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্বামীকেও টেক্কা দিতে পারেন অনায়াসে। আবার তাকে ঘিরে রয়েছে নানা বিতর্কও।
বিজ্ঞাপন
ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি এবং চেয়ারপারসন সুধা মূর্তির মেয়ে অক্ষতা। ঋষির স্ত্রী ছাড়াও অক্ষতার একাধিক পরিচয় আছে। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার অক্ষতার সঙ্গে ঋষির দেখা হয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময়।
২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠান করে ঋষি এবং অক্ষতার চার হাত এক হয়। ওই বছরের শুরুতেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন অক্ষতা। তার সম্পত্তি, আয়কর এবং রাশিয়ার সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্ক’র কারণে তদন্তের আওতায় আসেন তিনি।
যে সব ব্যক্তি ব্রিটেনের বাইরের বাসিন্দা কিন্তু পেশা সূত্রে ব্রিটেনে রয়েছেন, তাদের সে দেশের সরকারকে একটি বিশেষ কর দিতে হয়। ‘প্রভাব খাটিয়ে’ সেই কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠে অক্ষতার বিরুদ্ধে।
ব্রিটেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে ঋষি তার সংস্থার বেশ কিছু শেয়ার অক্ষতার নামে স্থানান্তর করেন। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসেও অংশীদারিত্ব রয়েছে অক্ষতার। এই সংস্থার অফিস রয়েছে রাশিয়াতেও।
কিয়েভের মস্কোর আগ্রাসনের পর রাশিয়া থেকে আয় হয় এমন সব ব্যবসা প্রশ্নের মুখে পড়ে। ব্রিটেনের প্রথম সারির রাজনীতিবিদ হওয়ার সুবাদে স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগের তির ছিল ঋষির দিকে। তবে ঋষি তার বা স্ত্রীর রাশিয়ায় ব্যবসা চালানোর কথা অস্বীকার করেন।
পরে অবশ্য ইনফোসিসের এক মুখপাত্র একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইনফোসিস রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধকে সমর্থন করে না এবং শান্তি চুক্তির পক্ষে। রাশিয়ায় ইনফোসিসের একটি ছোট দল রয়েছে। সেখান থেকে কেবল আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়া হয়। রাশিয়ার সঙ্গে এই সংস্থার কোনও সক্রিয় সম্পর্ক নেই।
অক্ষতার পক্ষে বলা হয়, তিনি ভারতীয় নাগরিক। তাই তিনি বিদেশে কর দিতে বাধ্য নন। তবে, তার আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। ইনফোসিসের অংশীদারিত্ব এবং লভ্যাংশের কারণেই তার আয়ের এই রমরমা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, অক্ষতাকে তার লভ্যাংশের ওপর কর দিতে হত। কিন্তু তিনি সরাসরি ব্রিটেনের বাসিন্দা না হওয়ায় তার এই কর মওকুফ হয়।
অক্ষতার স্বামী অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার কারণে এ নিয়ে আরও জলঘোলা হয়। ব্রিটেনের কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, ব্রিটেনের সাধারণ নাগরিকদের একাংশ বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি।
বিষয়টি নিয়ে বার বার বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হলে অক্ষতা এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘মানুষ আমাকে আয়কর দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে। আমি ব্রিটেনের আয়ের ওপর নির্দিষ্ট কর এবং আন্তর্জাতিক আয়ের ওপর আন্তর্জাতিক কর দিয়েছি। এই ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ আইনি। তবে ব্রিটেনের নাগরিক নন এমন কত জন এই কর দেন, তা আমার জানা নেই।’
স্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সুনাক কিন্তু প্রথম থেকেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বেশ এগিয়েই ছিলেন। কিন্তু তীরে এসে তরী ডুবল। নিন্দুকদের মতে, অনেকেই অক্ষতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিতর্ক এখনও ভোলেননি। আর তার প্রতিফলন ঘটেছে ভোটের ফলাফলে। আনন্দবাজার।
এসএস