তাইওয়ানের পেঙ্গু দ্বীপপুঞ্জের একটি নৌ স্টেশন পরিদর্শনের সময় সৈন্যদের সরঞ্জাম পরিচালনা করতে দেখছেন ভূখণ্ডটির প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। ছবিটি গত মঙ্গলবার তোলা

তাইওয়ান নিয়ে চীন ও ভূখণ্ডটির সরকারের মধ্যে উত্তজনা চলছে অনেকদিন ধরেই। তাইওয়ানের চারপাশে চীনা সামরিক বাহিনীর মহড়াকে ঘিরে সেই উত্তেজনা পৌঁছেছে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। এই পরিস্থিতিতে চীনের উপকূলে প্রথমবারের মতো একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী।

ভূপাতিত ওই ড্রোনটি মূলত অজ্ঞাত একটি বেসামরিক ড্রোন এবং বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) এটি চীনা উপকূলের একটি দ্বীপের কাছে তাইওয়ানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিন দু’য়েক আগে তাইওয়ান সতর্ক করে, চীনের সশস্ত্র বাহিনী তার ভূখণ্ডে প্রবেশ করলে আত্মরক্ষা এবং ‘পাল্টা আক্রমণ’ করার অধিকার প্রয়োগ করবে তাইপে। এমনকি নিজ সীমার মধ্যে প্রবেশকারী যেকোনো আকাশযানে হামলারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল তারা।

গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে নিজস্ব অঞ্চল বলে দাবি করে থাকে বেইজিং। গত আগস্ট মাসের শুরুতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের পর দ্বীপের চারপাশে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালায় দেশটি।

পেলোসির সেই সফরের পর দুই সপ্তাহ পার না হতেই তাইওয়ান সফরে যান মার্কিন আইনপ্রণেতাদের একটি প্রতিনিধি দল। এরপর আবারও দ্বীপটির চারপাশে সামরিক মহড়া শুরু করে চীন।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দিন দু’য়েক আগে জানান, তাইওয়ানের কাছে চীনের ‘ব্যাপক মাত্রার’ সামরিক টহল অব্যাহত রয়েছে এবং তাইওয়ান প্রণালীকে দুই ভাগে আলাদা করে ‘অভ্যন্তরীণ সমুদ্রে’ পরিণত করার বেইজিংয়ের ইচ্ছা এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার প্রধান উৎস হয়ে উঠবে।

তাইওয়ানের সরকার বলছে, তারা কাউকে প্ররোচনা দেবে না বা উত্তেজনা বাড়াবে না। তবে সম্প্রতি চীনের উপকূলের কাছাকাছি তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত দ্বীপগুলোতে চীনা ড্রোন বারবার উড্ডয়ন করার কারণে তারা বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে।

চীনের জিয়ামেন এবং কোয়ানঝো শহরের বিপরীতে তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত দ্বীপগুলোর গ্রুপ কিনমেনের প্রতিরক্ষা কমান্ড একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণায়ের প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নের ঠিক পরে (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা) ছোট লায়ন দ্বীপের ওপর সীমাবদ্ধ আকাশসীমায় প্রবেশ করে অজ্ঞাত বেসামরিক ওই ড্রোনটি।

এতে আরও বলা হয়েছে, দ্বীপে থাকা সৈন্যরা ড্রোনটিকে সতর্ক করার চেষ্টা করলেও তাতে কোনো ফল হয়নি। তাই এটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। ধ্বংস হয়ে যাওয়া ওই ড্রোনটির অবশিষ্টাংশ সমুদ্রে পড়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার তাইওয়ান প্রথমবারের মতো একটি ড্রোনে সতর্কীকরণ গুলি চালায়। মূলত চীনের উস্কানির দিকে ইঙ্গিত করে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ​​ইং-ওয়েন সামরিক বাহিনীকে ‘শক্তিশালী পাল্টা ব্যবস্থা’ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরই ড্রেনে গুলিবর্ষণের সেই ঘটনা ঘটে।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ​​ইং-ওয়েনের কার্যালয় থেকে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সাথে কথা বলার সময় সাই বলেন-  তাইওয়ানকে ভয় দেখানোর জন্য ড্রোন অনুপ্রবেশ করানোর পাশাপাশি অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করে চলেছে চীন।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, তাইওয়ান বিরোধ উস্কে দেবে না কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করব না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সময়মতো প্রয়োজনীয় এবং শক্তিশালী পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন সাই ​​ইং-ওয়েন। সেনাবাহিনীকে নির্ভয়ে এবং দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সাথে দেশকে নিরাপত্তা দিতে হবে।’

টিএম