অবশেষে আইএমএফের ২৯০ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা পেল শ্রীলঙ্কা
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার প্রাথমিক এক চুক্তিতে (স্টাফ লেভেল) পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আগামী চার বছর ধরে এই অর্থ শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি ঘোষণা দিয়েছে।
গত এপ্রিলে ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। দেশটির স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে ভয়াবহ এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তোরণের শেষ অবলম্বন ছিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া। অর্থনৈতিক কাঠামো আমূল সংস্কারের শর্তে আইএমএফ দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রকে ঋণ সহায়তায় রাজি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কলম্বোতে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের টানা ৯ দিনের আলোচনা শেষে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার নতুন তহবিল-সমর্থিত কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণের কাঠামো পুনর্গঠন করা।
সংস্থাটি বলেছে, ঋণের স্থায়িত্ব এবং অর্থায়নের মাঝে যে নিবিড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য পাওনাদারদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রয়োজন হবে শ্রীলঙ্কার।
আইএমএফ বলেছে, রাজস্ব বৃদ্ধি, ভর্তুকি বাতিল, নমনীয় বিনিময় হার নিশ্চিত এবং একেবারে তলানিতে নেমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে সম্মত হয়েছে শ্রীলঙ্কা।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অব্যাবস্থাপনা, অযৌক্তিক কর কাটছাঁট, করোনা মহামারির কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস ও ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা না ভেবে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় দেশটির দুরবস্থার প্রধান কারণ। গণবিক্ষোভের মুখে গত জুলাইয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যের দাম ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য প্রধান বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রুপির মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।
এসএস