গমের আটা ময়দা সুজির রপ্তানি নিষিদ্ধ করলো ভারত
অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধি রোধ এবং দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গমের আটা, ময়দা এবং সুজি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। শনিবার এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত মে মাসে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে গমের আটা, ময়দা এবং সুজি রপ্তানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) বলেছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এসব পণ্যের রপ্তানি করা যাবে।
বিজ্ঞাপন
ডিজিএফটি এক বিবৃতিতে বলেছে, গমের আটা, ময়দা, সুজি এবং এই খাদ্যপণ্য থেকে তৈরি অন্যান্য আটার রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে দেশটির বিদেশি বাণিজ্য নীতি ২০১৫-২০ এর আওতায় অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিধানগুলো এই বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
গত ২৫ আগস্ট ভারতের সরকার ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণে গমের আটা রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্বজুড়ে গমের প্রধান রপ্তানিকারক দুটি দেশ হলো রাশিয়া এবং ইউক্রেন। বিশ্ববাজারে গম বাণিজ্যের প্রায় এক-চতুর্থাংশই আসে ওই দুটি দেশ থেকে। গত ছয় মাস ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী গমের সরবরাহ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। যে কারণে বিশ্বজুড়ে ভারতীয় গমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও গমের দাম বেড়েছে।
ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত মে মাসে গম রপ্তানি বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। পরে বিশ্ববাজারে গমের আটার চাহিদাও ব্যাপক বেড়ে যায়। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে ভারত থেকে গমের আটার চালান প্রায় ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের আটার চাহিদা বৃদ্ধিতে দেশটির বাজারেও এর দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সরকার চলতি বছরে রেকর্ড ১১১ মিলিয়ন টন গম উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছিল। সরকারের এই পূর্বাভাসের পর বিশাল পরিমাণ গম রপ্তানির আশা করা হয়েছিল। কিন্তু গত মার্চ-এপ্রিলের দিকে দেশটিতে তীব্র তাপদাহ বয়ে যায়। যে কারণে শীতকালীন প্রধান এই খাদ্যশস্যের উৎপাদনের পূর্বাভাস ৫ শতাংশ হ্রাস করতে বাধ্য হয় দেশটির সরকার।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর বিশ্বজুড়ে গমের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের অনেক আমদানিকারক দেশ এই খাদ্যশস্যের তীব্র ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের গমের আটা রপ্তানি করেছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-জুন সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ১২৮ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে গমের খুচরা মূল্য প্রতি কেজিতে গড়ে ২২ শতাংশ বেড়ে ৩১ দশমিক ০৪ রুপি হয়েছে। এক বছর আগে একই সময়ে ভারতের বাজারে প্রতি কেজি গমের দাম ছিল ২৫ দশমিক ৪১ রুপি।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটির বাজারে গমের আটার খুচরা মূল্য গড়ে ১৭ শতাংশের বেশি বেড়ে ৩৫ দশমিক ১৭ রুপি হয়েছে; যা আগে ছিল ৩০ দশমিক ০৪ রুপি।
সূত্র: পিটিআই।
এসএস