ফাইল ছবি

টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করছে সমগ্র বিশ্ব। সংক্রামক এই ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশই কম-বেশি ভুগলেও এর একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল উত্তর কোরিয়া।

তবে চলতি বছরের মে মাসে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাব প্রথম দিকে বেশ জোরালো হলেও পরে নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করে দেশটি। আর এবার করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার দায় দক্ষিণ কোরিয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরীয় কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের প্রভাবশালী বোন দেশে কোভিড প্রাদুর্ভাবের জন্য দক্ষিণকে অভিযুক্ত করেছেন এবং এর জেরে ‘প্রতিশোধ নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন।

অবশ্য করোনা প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে পিয়ংইয়ং ‘বিজয়’ ঘোষণা করেছে বলে বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উড়ে আসা অজানা জিনিসের মাধ্যমেই দেশে করোনা ছড়িয়েছে বলে দাবি করেছিল উত্তর কোরিয়া। অদ্ভূত এই দাবি অবশ্য সিউল সেসময় প্রত্যাখ্যান করেছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মীরা বহু বছর ধরে উত্তরের সীমান্তে প্রচারপত্র এবং মার্কিন ডলার সম্বলিত বেলুন উড়িয়েছে। আর এর বিরুদ্ধে পিয়ংইয়ং দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করেছে। অবশেষে ২০২১ সালে কার্যকর হওয়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সীমান্তে প্রচারপত্র এবং মার্কিন ডলার সম্বলিত বেলুন ওড়ানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কিম জং উনের বোন ইয়ো জং দেশের কোভিড প্রাদুর্ভাবের জন্য এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে দায়ী করে বলেছেন, এগুলো ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’।

তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ -- এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা -- ‘দূষিত বস্তুর সাথে যোগাযোগ বা সংস্পর্শের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা’ স্বীকার করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অঞ্চলে লিফলেট, অর্থ, ভেজা লিফলেট এবং অন্য আইটেম পাঠাচ্ছে।’

ইয়ো জং সতর্ক করে বলেন, করোনা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ‘একটি শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ’ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে পিয়ংইয়ং। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের বেলুন পাঠানো অব্যাহত থাকলে, ‘আমরা কেবল ভাইরাস নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষকেও নির্মূল করে দেবো।’

এএফপি বলছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা করোনায় নতুন সংক্রমণের তথ্য না পাওয়ার কারণে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ‘উজ্জ্বল বিজয়’ ঘোষণা করেছে পিয়ংইয়ং।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যতম খারাপ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে খুবই কম সরঞ্জামে সজ্জিত হাসপাতাল, কয়েকটি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) রয়েছে। এছাড়া দেশটিতে করোনা চিকিৎসার ওষুধ বা ভ্যাকসিনও নেই।

এমনকি বোন ইয়ো জং-এর মন্তব্য অনুসারে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর কিম জং উন দৃশ্যত নিজেও কোভিড-এ ভুগছিলেন। ইয়োর ভাষায়, ‘এই কোয়ারেন্টাইন যুদ্ধের দিনগুলোতে উচ্চ জ্বরে ভুগছিলেন কিম। কিন্তু তিনি এক মুহূর্তের জন্যও শুয়ে থাকতে পারেননি কারণ কিম জনগণের কথা ভাবছিলেন।’

টিএম